ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: বিদেশ থেকে উড়োজাহাজে করে বিভিন্ন পণ্য এনে সেগুলো মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে ঢাকা কাস্টম হাউসের কুরিয়ার ইউনিট দিয়ে বের করে নিয়ে গিয়েছেন বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ার কর্তৃপক্ষ। আর এই কাজে প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতা করেছেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মকলেস।
যদিও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মকলেসকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। তবে ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গিয়েছে, নভোএয়ারের সকল কার্যক্রম ঢাকা কাস্টম হাউসে নানা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালনা করেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মকলেস। আর মকলেসের সহযোগিতায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নভোএয়ার এবং মকলেস লাভবান হয়েছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সরকার। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে শুল্ক বিভাগ।
বাংলাবার্তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, নভোএয়ার কর্তৃপক্ষ ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ৩০টি পণ্যের চালান মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে ঢাকা কাস্টম হাউসের কুরিয়ার ইউনিট দিয়ে বের করে নিয়েছেন।আর এই ঘটনায় ঢাকা কাস্টম হাউসের একটি অসাধু চক্র নভোএয়ার এবং সিএন্ডএফ মকলেসকে সহযোগিতা করেছেন। ফলে উভয়পক্ষই এখানে লাভবান হয়েছেন।
অনসন্ধানে আরও জানা যায়, বেসরকারি নভোএয়ার কর্তৃপক্ষ যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করেছেন সেসব পণ্য উজোজাহাজের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প কারখানাতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ফলে ঢাকা কাস্টম হাউসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ মনে করছে, যেসব পণ্যের চালান মিথ্যা ঘোষণায় বেরিয়ে গিয়েছে সেসব নথি আবার তদন্ত করলে পণ্যগুলো কোথায় ব্যবহার হয়েছে সেটা জানা যাবে।একই সাথে কি পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে সেটাও বেরিয়ে আসবে। নভোএয়ারের আমদানি করা এমন ৩০টি বিল অফ এন্ট্রি নাম্বার পাওয়া গিয়েছে।
যেখানে প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক নিয়মে এইচএসকোডে শুল্কায়ন না করে নিম্নহার কোডে শুল্কায়ন করা হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্য শুল্কায়ন করে কুরিয়ার দিয়ে বের করে নেওয়া হয়েছে।
অনিয়ম করা বিল অফ এন্ট্রি নাম্বারগুলো হচ্ছে, ৩৯০০৪৪ (২০২৩ সালের ১৭ মে), ১৫২৫৫২ (২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি), ৫২১০৬৭ (২০২২ সালের ২৯ জুন), ৫৩০৪৪২ (২০২২ সালের ৩ জুলাই), ৫২৮৮০৩ (২০২২ সালের ৩ জুলাই), ৫২২৪৫১ (২০২২ সালের ৩০ জুন), ৫২১১০৮ (২০২২ সালের ২৯ জুন), ৫৫৯৭৮৩ (২০২২ সালের ১৭ জুলাই)।
আরও বিল অফ এন্ট্রি নাম্বারগুলো হচ্ছে, ৫২১০৭৬ (২০২২ সালের ২৯ জুন), ৫২১০৯১ (২০২২ সালের ২৯ জুন), ৫৪৫৮৯০ (২০২২ সালের ৭ জুলাই), ৫৩৭১০১ (২০২২ সালের ৪ জুলাই), ৬০২৫২৭ (২০২২ সালের ৩১ জুলাই), ৫৮৫৩১৩ (২০২২ সালের ২৫ জুলাই), ৫৭৫৪১৬ (২০২২ সালের ২১ জুলাই), ৫৭৫৩৭৭ (২০২২ সালের ২১ জুলাই), ৫৬৪১৭১ (২০২২ সালের ১৮ জুলাই), ৫৬৪১১৫ (২০২২ সালের ১৮ জুলাই), ৫৫৯৯৯৮ (২০২২ সালের ১৭ জুলাই), ৫৫৯৯৮৫ (২০২২ সালের ১৭ জুলাই)।
বাকি বিল অফ এন্ট্রি নাম্বারগুলো হচ্ছে, ৫৫৯৯৬৩ (২০২২ সালের ১৭ জুলাই), ৫৫৯৯৫৭ (২০২২ সালের ১৭ জুলাই), ৫৭৫৫৫০ (২০২২ সালের ২১ জুলাই), ৫৭৫৫১৮ (২০২২ সালের ২১ জুলাই), ৫৭৫৪৯৯ (২০২২ সালের ২১ জুলাই), ৫৭৫৪৭০ (২০২২ সালের ২১ জুলাই), ৬০২৯২৬ (২০২২ সালের ৩১ জুলাই), ৬০২৮৯৮ (২০২২ সালের ৩১ জুলাই), ৬০২৮২৫ (২০২২ সালের ৩১ জুলাই), ৬০২৭৯৪ (২০২২ সালের ৩১ জুলাই)। এই ৩০টি বিল অফ এন্ট্রি নাম্বারের প্রতিটি চালানে কম শুল্ক তথা মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্যের চালান বেরিয়ে গিয়েছে। যেখানে সরকারের ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে আরও জানা গিয়েছে, সাধারণত নভোএয়ার যেসব পণ্য আমদানি করেছে সেসব পণ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ শতাংশের বেশি শুল্ককর হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে মাত্র ২০ শতাংশের বেশি শুল্ককর পরিশোধ করে পণ্যের চালানগুলো বের করা হয়েছে। এখানে এসেসমেন্ট আরও, এআরও যারা দায়িত্বে ছিলেন কুরিয়ারে তাদের সখ্যতা পেয়েছে বাংলাবার্তা। একই সাথে শুল্কায়ণ ও পরীক্ষণ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ঠতাও রয়েছে নভোএয়ারের এসব পণ্যের চালান খালাস করণে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা কাস্টম হাউসের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বাংলাবার্তাকে বলেন, কাস্টম যদি পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট করে তাহলে ৫ বছরের মধ্যে দাবিনামা করতে পারে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।সেক্ষেত্র কাস্টম ফাঁকিকৃত রাজস্ব উদ্ধার করতে পারবে। এছাড়া আমরা বিষয়গুলো নিয়ে এখন তদন্ত করবো। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মকলেসের বিগত ৫ বছরের কর্মকান্ড তদন্ত করা হবে বলেও এই কর্মকর্তাকে বাংলাবার্তাকে বলেন।
তবে এ বিষয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট মকলেস বাংলাবার্তাকে বলেন, এখানে যারা কাজ করে সবাই একইভাবে কাজ করে। সবাই এই ধরনের কাজ করে। কেউ সাধু না। আমরা ভেসে আসি নাই।এয়ারপোর্টে হাজার হাজার মানুষ ব্যবসা করে। এভাবে আমাদের হয়রানি করছেন। এটা ভাল কাজ না। আপনি নিউজ করলে আমার কিছুই হবে না।
এ বিষয়ে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বাংলাবার্তাকে বলেন, সিএন্ডএফ মকলেসের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তাকে চিনি না। ঢাকা কাস্টম হাউসের কুরিয়ার ইউনিট দিয়ে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আপনাদের ৩০টি পণ্যের চালান বেরিয়ে গিয়েছে তথা ভুল ঘোষণায় পণ্য বেরিয়ে গিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমার পক্ষে ব্যাখা দেওয়া সম্ভব না।
আরও পড়ুন>>> মিথ্যা ঘোষণায় কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে একাধিক পণ্যের চালান (পর্ব এক)
পরবর্তী পর্ব দেখতে চোখ রাখুন বাংলাবার্তায়
বাংলাবার্তা/এসজে