ছবি: বাংলাবার্তা
চলতি বছরের (জানুয়ারি) শুরুতে বদলির আদেশ পেলেও দায়িত্ব হস্তান্তর না করে পুরোদমে অফিস করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) আলোচিত কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ।
তিনি গত ২ বছর ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘ধরাকে-সরা জ্ঞান’ করে এই প্রতিষ্ঠানে নানাভাবে আলোচনায় এসেছেন।
সূত্র থেকে জানা গেছে, বিএডিসি সদস্য পরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা) পদে প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালন করছেন সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার মো. আব্দুস সামাদ। আর এই সময়ের আগে থেকেই দেশের সার সেক্টরে শুরু হয়েছে সরকারি সার আত্মসাতের মহোৎসব।
বিশেষ করে, বিএডিসি এবং বিসিআইসির কয়েক হাজার কোটি টাকার সার আত্মসাৎ করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনের মালিকানাধীন মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এরপর থেকে নড়েচড়ে বসেছিল কৃষি মন্ত্রণালয় অধীনস্থ সকল প্রতিষ্ঠান এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এমনকি, আলোচিত ওই প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।
তবে নথিপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, বিএডিসির সদস্য পরিচালক মো. আব্দুস সামাদ দায়িত্ব গ্রহণের পর আলোচিত পোটন ট্রেডার্স বিএডিসির পাওনা সার বুঝে না দিয়েই ফের নতুন টেন্ডারে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে পুনরায় বিএডিসির সার পরিবহন কাজে জড়িয়ে নতুন করে আরও ৫০ হাজার মেট্রিকটন সার হজমের সুযোগ পেয়েছে।
আরও পড়ুন: বিটিভির দুর্নীতির রাণী মাহফুজা আক্তার
এছাড়াও আব্দুস সামাদের সহযোগিতায় সক্ষমতা যাচাই না করেই বিপুল অংকের ঘুষের বিনিময়ে নতুন ঠিকাদার অন্তর্ভুক্তি ও টেন্ডার শর্ত না মেনে ঘুষের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেওয়া, পছন্দের ঠিকাদার পরিবহন কাজ না পেলে রি-টেন্ডার করিয়ে তাদেরকে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করা হয়েছে। এমনকি ৮-১০টি টেন্ডারে ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের নজির সৃষ্টি করেন তিনি।
সার রক্ষণাবেক্ষণ-বন্টনের চেয়ে আমদানিতে পটু: বিগত কয়েক বছরে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে আমদানী করা সার সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। গুণাগুণে ত্রুটিপূর্ণ এসব সার কিছু কিছু পরিবহন ঠিকাদার ফের নতুন বস্তায় ভরে বিএডিসি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গুদামে পাঠাচ্ছে, তবে এসব ঘটনায় বরাবরই উদাসীন মো. আব্দুস সামাদ।
আরও পড়ুন: মিথ্যা ঘোষণায় কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে নভোএয়ারের ৩০ পণ্যের চালান
এছাড়াও পরিবহন ঠিকাদারদের কাছে এখনও লাখ লাখ মেট্রিকটন টিএসপি, এমওপি, ডিএপি সার রয়েছে। এসব সার আদেও বিএডিসির গুদামে আসবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্ধেহ আছে। এছাড়াও দেশে ডলার সংকটকালে কৃষি মৌসুমে সারের চাহিদা না বুঝে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনে বিপুল অর্থ অপচয়ের ঘটনাও ঘটেছে এই সময়কালে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে কাজ করার পরিবর্তে বিএডিসি সদস্য পরিচালক মো. আব্দুস সামাদ নতুন নতুন আমদানীতে ব্যস্ত থাকেন। এতে লেজে গোবরে অবস্থায় পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএডিসি।
বিএডিসির সার এখনও অন্যের কাছে, গুদামে আনা নিয়ে সংশয়: পরিবহন ঠিকাদারি কাজের সুযোগ নিয়ে বিএডিসির সার কালো বাজারে বিক্রি করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পরেও ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান বিএডিসি যথেষ্ঠ সচেতন হয়নি বলে মনে করেন এ খাতের সংশ্লিষ্টদের।
বিশেষ করে, বিগত দিনে দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত হয়ে কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে ফের কাজের সুযোগ দেওয়া, ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করা, ব্যাংক গ্যারান্টি না নিয়ে কাজ দেওয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা সার আদায়ে গুরুত্ব না দেওয়াকে দুর্নীতি উসকে দেওয়া বলে মনে করেন অনেকে।
বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, পরিবহন ঠিকাদার হিসেবে যুক্ত হয়ে সম্প্রতিকালে স্বদেশ শিপিং এন্ড লজিস্টিক, মেসার্স প্যাসিফিক কনজ্যুমার গুডস, বঙ্গ ট্রেডার্সের মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠন লাখ লাখ মেট্রিক টন সার পরিবহন না করে নিজেদের গুদামে রেখেছেন বলে অভিযোগ আছে। যদিও এসব সার শেষ পর্যন্ত বিএডিসির গুদামে ফিরবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্ধেহ আছে। কারণ, বিগতদিনে একইভাবে পোটন ট্রেডার্স, নবাব এন্ড কোং, কুষ্টিয়া ট্রেডিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠন সরকারি সার হজম করে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে।
আরও পড়ুন>>> মিথ্যা ঘোষণায় কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে একাধিক পণ্যের চালান (পর্ব এক)
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বিএডিসি সদস্য পরিচালক মো. আব্দুস সামাদকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য পদে এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. ওসমান ভুঁইয়াকে বিএডিসির সদস্য পদে বদলি করা হয়। তবে বিগত ২২ দিনেও বিএডিসি সদস্য পরিচালক মো. আব্দুস সামাদ দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি।
এ সকল বিষয়ে জানতে বিএডিসি সদস্য পরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা) মো. আব্দুস সামাদের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়াও বিএডিসি চেয়ারম্যান দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
বাংলাবার্তা/এসজে