ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অবস্থিত মদনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এই ভূমি অফিসকে নিজের হাতের মুঠোয় করে নিয়েছেন সুরুজ মিয়া। অন্যের জমি নিজের দখলে নেওয়াই তার কাজ। তেমনি এক ভুক্তভোগী মো. রিয়াজ উদ্দিন পাটোয়ারী।
জমি কিনলেও দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে নিজের জমিতে যেতে পারেন না ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রিয়াজ উদ্দিনের বাবা ২০১৭ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে মারা যায়। তারপর সে তার বাবার সব দলিলপত্র ঘেটে দেখতে পাই নারায়ণগঞ্জের মনোহরখারবাগ তাদের জমি আছে। যা তার বাবা কিনেছিলো। ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে ভুক্তভেগী। এরপর সেখানে আনিস নামে একজন ভূমি অফিসারের সাথে কথা হয়। তিনি তাকে নামজারির জন্য বলেন। অফিসার নিজেই ওখানে রেকর্ড বুকে রিয়াজের বাবার নাম দাগ নাম্বারসহ দেখান। তারপর নামজারির সব কাগজপত্র আনিসকে দেওয়া হয়। পরে আনিস নামজারি করে একই সাথে ভুগক্তভোগীরা অনলাইন থেকে খসড়া আবেদন উঠাতে পারলেও ডিসিআর কপি পান না।
এরপর নারায়ণগঞ্জ ভূমি অফিসে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা ভুক্তভোগী রিয়াজের সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং এতোদিন পরে কেন এসেছেন সেটা তলব করতে থাকেন। এযেন নিজের জমি বুঝে নিতে গিয়ে নিজেই যেন অপরাধ করে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন>> বদলির পরেও বিএডিসির চেয়ার আঁকড়ে আব্দুস সামাদ!
এ বিষয়ে রিয়াজ বাংলাবার্তাকে বলেন, জমির বিষয়ে মদনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে জানায় এই জমি সুরুজ মিয়া নামের একজন আমাদের জমি দখল করেছে।সুরুজ মিয়া একজন দুর্ধর্ষ ভূমিদস্যু। তার হাতের মুঠোয় এই ভূমি অফিস। পরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পরি, সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। তার কথায় এই ভূমি অফিসের সব কাজ হয়। জমি আমার বাবার নামে থাকলেও দুর্ধর্ষ ভূমিদস্যু সুরুজ মিয়া সেখানে বালু ফেলে দখল করে রেখেছে।
রিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, আমার বাবা নুর মোহাম্মদ পাটোয়ারীর নামে খাতিয়ান ও ওয়ারিশ কাগজপত্র থাকার পরও কিভাবে সুরুজ মিয়া নামে নামজারি হয়? এরপর আমি নামজারি করতে চাইলে ভূমি অফিসের লোকজন আমাকে সুরুজ মিয়ার ভয় দেখায় এবং নামজারির জন্য আমার কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয় । কিন্তু আমার কাছে তো এত টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নাই। আমার বাবা এতোটুকুই জমি রেখে গেছেন। সেটাই আমরা চাই।
এই ভুক্তভোগী আরও জানান, এই জমি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত খালি ছিলো। মদনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করার পরে তারা আমার কাগজপত্র নিয়ে সুরুজ মিয়ার নামে নামজারি করেছে। ২০২৪ সালে সেই জমি এখন বালু দিয়ে ভরা। পরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পরি এই কাজের পেছনে ভূমি অফিসেরর কর্মকর্তারা জড়িত।
তিনি আরও জানান, এখন আমি এই জমি কারও কাছে বিক্রি করেতে পারছি না। আর নিজেও সুরুজ মিয়ার ভয়ে দখলে নিতে পারছি না। মদনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা আমার সমস্যার সমাধান না করে বরং আমার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা চাই।
এদিকে এ বিষয়ে দেওয়ানবাগী উকিলের সাথে কথা হলে তিনি বাংলাবার্তাকে বলেন, এই জমি আমরা ক্রয় করবো কিন্তু নামজারি সুরুজ মিয়ার নামে থাকায় তা কিনতে পারবো না। যদি নুর মোহাম্মদ পাটোয়ারীর নামে নামজারি আনা যায় তাহলে তারা সেই জমি ক্রয় করবে।
আরও পড়ুন>> ৩৫শ টাকা বেতনের চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মনিষা রাণী কর্মকার বাংলাবার্তাকে বলেন, যদি কোন ব্যক্তি হয়রানির শিকার হন তাহলে জেলা প্রশাসক বা ভূমি কমিশনার বরাবর আবেদন দিতে পারেন। এছাড়া একজনের জমি যদি কেউ মিথ্যা বা ভুলভাবে নামজারি করে তাহলে সেটা মিসকেস এর মাধ্যমে আদালতে মামলার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। অপরদিকে যেকোন নামজারি ভুলে হলেও সেটা প্রমাণ সাপেক্ষে যেকোন সময় প্রকৃত দাবিদার তার জমিটি বুঝে পাবেন।
তিনি আরও বলেন, যেকোন দুর্নীতির বিরদ্ধে আমি রয়েছি। যেকোন সহযোগিতায় আমি সর্বাত্মকভাবে সবসময় ভুক্তভোগীদের পাশে রয়েছি। এছাড়া মদনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে আমি খোঁজ নিবো এবং ব্যবস্থা নিবো।
বাংলাবার্তা/এসজে