ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: বৈমানিক ক্যাপ্টেন ফারিয়াল বিলকিস আহমেদ। তিনি দীর্ঘ ৩৮দিন বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বিহীন ছিলেন। আর বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া কোন বৈমানিক বিমান পরিচালনা করতে পারেন না। কিন্তু এই বৈমানিক এই সময়ে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ৪টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। যা বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বাংলাবার্তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই অনিয়মের ঘটনা। বৈমানিক ফারিয়ালের অনিয়মের ২য় পর্ব দেখতে চোখ রাখুন বাংলাবার্তায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈমানিক ক্যাপ্টেন ফারিয়াল বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭ বিমানে কর্মরত। কিন্তু তিনি ঘটনা ঘটান বোয়িং ৭৭৭ এর ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকার সময়ে। ক্যাপ্টেন ফারিয়ালের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এর বৈধ মেয়াদ ছিলো ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর তিনি পরবর্তী মেডিক্যাল করেন ২০২১ সালের ৮ নভেশ্বর। ফলে তিনি ৩৮ দিন বৈধ মেডিক্যাল ছাড়া ছিলেন এবং যার মধ্যে সিমুলেটর ট্রেনিং করাসহ ৪টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এতে তার চরম দায়িত্ব হীনতার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন>> অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন বৈমানিক মাসুদ
অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া এই বৈমানিক ফারিয়াল ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর ঢাকা থেকে উহান এবং উহান থেকে ঢাকা ৪১৯জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাই করেছেন। একই সাথে ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর আবার তিনি ঢাকা থেকে গুয়াংজু এবং গুয়াংজু থেকে ঢাকা ৪ শতাধিকের বেশি যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এছাড়া বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট না থাকলেও ২০২১ সালের ২ অক্টোবর তিনি সিমুলেটর ট্রেনিং করেছেন। কিন্তু কিভাবে আর কার ক্ষমতায় তিনি মেয়াদ উত্তীর্ণ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা এবং সিমুলেটর ট্রেনিং করলেন সেটা দেখে রীতিমত বাংলাদেশ সিভিল হতভম্ব হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন বলছে, বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া কোন ধরনের বিমান পরিচালনা করা রীতিমত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সাথে বৈধ মেডিক্যাল ছাড়া কোন বৈমানিক যদি ফ্লাইট পরিচালনা করে আর ঐ সময় যদি পরিচালিত হওয়া বিমানটি কোন ধরনের দুর্ঘটনায় পতিত হয় তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে।
এদিকে বাংলাদেশ বিমান, সিভিল এভিয়েশনের কয়েকজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং বাংলাবার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, যেসময়ে তথা ৩৮ দিনের মধ্যে এই বৈমানিক ফারিয়াল মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া তিনি যে ৪টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন এই সময়ে যদি বাংলাদেশ বিমানের বিমানটি কোন ধরনের দুর্ঘটনায় পতিত হতো, তাহলে বাংলাদেশ বিমানের বিমানটির কোন ধরনের ইন্সুরেন্স কভারেজ থাকতো না। সাধারণত প্রতিটি বিমানের জন্য প্রত্যেকটি বিমান কোম্পানি ইন্সুরেন্স সুবিধা নিয়ে থাকে। কারণ যদি কোন বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয় তাহলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে আর্থিক সুবিধা পায় বিমান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। একই সাথে যাত্রীরা জীবন বীমা সুবিধা পেয়ে থাকে।
আরও জানা যায়, কোন বৈমানিকের ভুলের কারণে অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ সার্টিফিকেট অথবা বৈমানিক যদি ভুলভাবে বিমান পরিচালিত করে তাহলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে বিমান কোন আর্থিক সুবিধা পাবে না। বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া কোন ফ্লাইং পরিচালিত করলে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী নিয়ম লঙ্ঘন বলে বিবেচিত। এদিকে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোন বৈমানিক মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া বিমান পরিচালনা করেন তাহলে প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য বৈমানিককে ৯০ দিন করে সাসপেন্ডসহ(গ্রাইন্ডেড)বিমান পরিচালনা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক দন্ডের বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন ফারিয়াল অবৈধভাবে যে ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। সেখানে এই বৈমানিকের বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন আইন অনুযায়ী, ৩৬০ দিন গ্রাউন্ডেড থাকবে। একই সাথে বিমান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান তথা বাংলাদেশ বিমানকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদন্ড হিসাব করলেও সেখানে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে সংস্থাটিকে।
আরও পড়ুন>> অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে ২ যুগ ধরে বৈমানিক মাসুদ
শুধ তাই নয়, অবৈধভাবে ২০২১ সালের ২ অক্টোবর ক্যাপ্টেন ফারিয়াল যে সিমুলেটর ট্রেনিং করেছেন সেটিও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা বিমানের ট্রেনিং ম্যানুয়াল অনুযায়ী, সিমুলেটর ট্রেনিং করার সময় একজন বৈমানিকের অবশ্যই বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। একই সাথে যে পরীক্ষক ক্যাপ্টেন ফারিয়ালের সিমুলেটর পরীক্ষা নিয়েছেন তিনি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট চেক না করা তথা দায়িত্বে অবহেলার কারণে সমানভাবে শাস্তির আওতায় পড়বেন। এমনকি এই পরীক্ষকেরও জরিমানা হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৭৭ এর দরজা ভাঙ্গেন এই বৈমানিক। তখন তিনি এই বিমানের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান এই বৈমানিক ফারিয়ালকে শাস্তি না দিয়ে উপহার হিসেবে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়। যা নিয়েও বাংলাদেশ বিমানের বৈমানিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ রয়েছে।
ক্যাপ্টেন ফারিয়ালের নিয়ম ভঙ্গ করে ফ্লাইট পরিচালনা এবং সিমুলেটর ট্রেনিং করার বিষয়ে জানতে একাধিকবার বাংলাবার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠালে এই বৈমানিক প্রতিবেদকের নাম্বার ব্লক করে দেন। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে এবিষয়ে জানতে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিমকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনিও ফোনটি রিসিভ করেননি।
তবে এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলাবার্তাকে বলেন, বৈধ মেডিক্যাল সার্টিফিকেট না থাকা চরম অপরাধ। এভাবে একজন বৈমানিক কিভাবে নিয়ম ভঙ্গ করতে পারেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান এবং সিভিল এভিয়েশনের বিষয়টি কঠোর নজরদারি দিয়ে দেখা উচিত। আর আইনে অপরাধ করলে যে শাস্তি আছে সেটা সঠিকভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার দেখছি বিমানের বৈমানিকরা একের পর এক অনিয়ম করেই চলেছেন। কিন্তু শাস্তি দেখছি না। এরআগেও লাইসেন্স নিয়ে কান্ড হলো তাদের সাজা কি হলো সেটাও আমরা জানি না। আসলে বিমানের আরও কঠোর হওয়া উচিত এবং শুদ্ধতা চর্চা করা উচিত।
বাংলাবার্তা/এসজে