ছবি: বাংলাবার্তা
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারা ও বনানীতে জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সরকারকে কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কর ফাঁকি দেওয়ার মধ্যে রয়েছে, কোম্পানী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক ও আইনজীবীরা।
অভিযোগ উঠেছে এসব এলাকায় বহুতল ভবন বিক্রি বা হস্তান্তর দলিলে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে অনেক কম মূল্য দেখানো হচ্ছে। আর ফ্ল্যাট নির্মাণে প্রতি বর্গফুটে যে খরচ হয় তার চেয়েও কম দাম দেখানো হয় কেনাবেচায়।
আরও পড়ুন>>বিটিভির দুর্নীতির রাণী মাহফুজা আক্তার
সম্প্রতি এনবিআরের সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) তদন্তে দেখা গেছে, বনানী-তেজগাঁও লিংক রোডের একটি বাণিজ্যিক বহুতল ভবন এবং গুলশান এভিনিউ রোডে একটি বহুতল আবাসিক ভবনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে বিষয়টির যথার্থতা পাওয়া যায় এবং এক্ষেত্রে জমি/ফ্ল্যাট/স্পেস বিক্রয় বা হস্তান্তরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
তদন্তে আরও দেখা গেছে, বনানী-তেজগাঁও লিংক রোডে অবস্থিত একটি বিখ্যাত ডেভেলপার কোম্পানির বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ও গুলশান এভিনিউ রোডে আবাসিক প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছে এমন ক্রেতাদের আয়কর নথি অনুসন্ধানে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে।
আরও পড়ুন>>
নিয়ম ভঙ্গ করে বৈমানিক ফারিয়ালের ফ্লাইট পরিচালনা
যে অভিশাপ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে একটি প্রজন্মকে
এ ঘটনায় সিআইসি জানিয়েছে, ক্রেতা তাদের ক্রয়কৃত ফ্ল্যাট বা ফ্লোর স্পেসের বিনিয়োগ মূল্য আয়কর নথিতে যথাযথ মূলোর চেয়ে অনেক কমে নামমাত্র মূল্যে প্রদর্শন করেন। আবার কেউ কেউ ৩-৪ বছর ধরে কিস্তিতে টাকা অগ্রীম পরিশোধ করে আসলেও পরিশোধকৃত কিস্তির টাকা অগ্রীম হিসেবে আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন নি।
পরবর্তীতে কম মূল্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে নথিতে প্রদর্শন করবেন বা নাও করতে পারেন দুটোই হতে পারে। কিন্তু এই ঘটনায় দুইদিক দিয়ে রাজস্ব হারাচ্ছে দেশ । একদিকে এই বিনিয়োগ করতে যে বড় অংকের টাকা তারা খরচ করেন তার উৎস গোপন করে বড় অংকের আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে আবার অন্যদিকে কম মূল্যে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কম পরিমাণ উৎসে আয়কর ও অন্যান্য রাজস্ব পরিশোধ করছেন।
আরও পড়ুন>>হোম অব ক্রিকেট: বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট
এনবিআরের সিআইসির অনুসন্ধানে উত্তর গুলশানে দক্ষিণমুখী লেকের পাড়ে অবস্থিত বহুতল ডুপ্লেক্স, সিমপ্লেক্স ও পেন্টহাউস আবাসিক ভবনের স্পেস ক্রেতাদের ভয়াবহ কর ফাঁকির বিষয়টি উঠে আসে। ক্রেতাদের মধ্যে একজন ঢাকার বিখ্যাত চক্ষু হাসপাতালের স্বনামধণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ধারণা করা যায় তিনি ডাক্তারি পেশা হতে অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার জন্য ৪৩৭৫ বর্গফুটের ১৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাটকে ৪.৫ কোটি টাকা মূল্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ৮.৫ কোটির সম্পদ খুব সহজেই বৈধ করেছেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন ক্রিকেটার আবাসিক ভবনটিতে ১২.৪০ কোটি টাকার ফ্ল্যাট ক্রয় করলেও তিনি তা আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন নি।
আরও পড়ুন>>সুরুজের হাতের মুঠোয় মদনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস
অনুসন্ধানে আরও তথ্য উঠে এসেছে, একটি প্রসিদ্ধ সিকিউরিটিজ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১৭০০ বর্গফুটের ৪৯ কোটি টাকার ফ্ল্যাটকে ১০ কোটি টাকা মূল্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ৩৯ কোটি টাকার সম্পদ এর উৎসের উপর কর ফাঁকি দিয়েছেন। অন্য একজন ক্রেতা হচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের স্বনামধন্য ব্যারিস্টার। তিনি ফ্ল্যাট ক্রয়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও এখনও তিনি ফ্ল্যাটটি আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন নি। অন্যদিকে একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী গুলশান ৫০ নম্বর রোডের বহুতল ভবনে প্রায় ২৮ কোটি টাকার স্পেস ক্রয় করলেও তিনি আয়কর রিটার্নে তা এক টাকাও প্রদর্শন করেন নি ।
আরও পড়ুন>> ৩৫শ টাকা বেতনের চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক
অনুসন্ধানে আরও বলা হয়েছে, বনানী-তেজগাঁও লিংক রোডের বাণিজ্যিক ভবনটিতে অনুসন্ধানে স্পেস হিসাবে বিনিয়োগ করেছেন এমন একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানীর অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সিকিউরিটিজ কোম্পানী ৭৩ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও তা অডিট রিপোর্টে প্রদর্শন করেছেন মাত্র ৫৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রায় পুরো বিনিয়োগ ৭২ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে বৈধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>অর্থ আত্মসাৎসহ নানা কেলেঙ্কারিতে বরখাস্ত সোনালী ইন্স্যুরেন্সের সিইও
অন্যদিকে অপর কোম্পানী পরিশোধ করেছে ১৩ কোটি টাকা, কিন্তু অডিট রিপোর্টে তা প্রদর্শন করা নেই। আবার একটি নামকরা সাইকেল প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী কোম্পানি ৩৫.২৫ কোটি টাকা মুলোর বাণিজ্যিক স্পেস ক্রয় করলেও তা আয়কর নথিতে প্রদর্শন করা হয়নি। এরকম রাজস্ব ফাঁকির ভয়াবহ চিত্র সর্বত্র বিরাজমান।
আরও পড়ুন>> বদলির পরেও বিএডিসির চেয়ার আঁকড়ে আব্দুস সামাদ!
ক্রয়কৃত বা বিনিয়োগকৃত সম্পদকে যথাযথমূল্যে প্রদর্শন করা নিশ্চিত করা গেলেই কেবলমাত্র রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে। একদিকে অপ্রদর্শিত আয় যেমন যথাযথ আয়কর পরিশোধ করে আয়কর নথিতে প্রদর্শিত হবে তেমন অন্যদিকে বিনিয়োগকৃত সম্পদ রেজিস্ট্রেশনকালে যাযথযথ উসে কর আহরণ সম্ভব হবে।
বাংলাবার্তা/এআর/এসজে