ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আবারও সোনা চুরির ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে এক প্রবাসীর ১টি সোনার বার চুরি করে বাসায় চলে যান কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায় (সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা)। যেখানে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিরাপত্তা বেষ্টিত বিমানবন্দরে যাদের কাছে রয়েছে দেশের জনগণের আমানত তারাই এখন রক্ষক যখন ভক্ষক হয়েছেন।
আরও পড়ুন>>গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শাহজালাল বিমানবন্দরের মূল্যবান গুদাম থেকে ৬১ কেজির বেশি সোনা চুরি হয়েছে। যেখানে কাস্টমসের ২ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল এবং শাহেদ নিজেরা সোনা চুরির ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথাও বলেছেন। এই শহিদুল এবং শাহেদের কাস্টমসে নিয়োগ হয় রংপুরে। একই সাথে ঢাকা কাস্টমস হাউসের শাহজালাল বিমানবন্দরের মূল্যবান গুদামে কর্মরত পিংকু রায়েরও নিয়োগ হয় রংপুরে।
আরও পড়ুন>>
নিয়ম ভঙ্গ করে বৈমানিক ফারিয়ালের ফ্লাইট পরিচালনা
যে অভিশাপ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে একটি প্রজন্মকে
কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শহিদুল ও শাহেদের খুব আস্থাভাজন এবং প্রিয় হচ্ছেন এই পিংকু রায়। ৬১ কেজি সোনা চুরির রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ঘটলো সোনা চুরির ঘটনা।
বাংলাবার্তার অনুসন্ধান বলছে, শুক্রবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে যাত্রী বেসরকারি ইউএস বাংলার বিএস-৩৪২ ফ্লাইট যোগে দুবাই থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর বিমানবন্দর থেকে সকল মালামাল সংগ্রহ করে সাথে গোল্ডবারের শুল্ক পরিশোধ করে (১১৬ গ্রাম সোনার বার) ক্যানোপি ২ নম্বর দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যান। অতপর যাত্রী মহিবুর রহমান(৩৩) বুঝতে পারেন তার সাথে প্যান্টের মধ্যে থাকা সোনার বারটি নেই।
আরও পড়ুন>> ৩৫শ টাকা বেতনের চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এরপর যাত্রী মহিবুর এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে একটি অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এপিবিএন বিমানবন্দরের সকল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। এক পর্যায়ে দেখা যায়, যাত্রী মহিবুরের সোনার বারটি কাস্টমসের গ্রীন চ্যানেলের স্ক্যানিং মেশিনের সামনে ফ্লোরে পড়ে ছিলো। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায় সোনার বারটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে পা দিয়ে লাথি মেরে একপাশে সরিয়ে রাখেন। এরপর সুকৌশলে সোনারবারটি পকেটে তুলে নেয় কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায়। যিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে মূল্যবান গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি দ্রুত বিমানবন্দর ত্যাগ করে বাসায় চলে যান।
আরও বেরিয়ে আসে, এরপর এপিবিএন কর্মকর্তারা কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায় এপিবিএন অফিসে আসেন। অতপর এপিবিএনের জিজ্ঞাসাবাদে কাস্টমস কর্মকর্তা অভিযোগকারীর হারানো সোনার বারটি অসৎ উদ্দেশ্যে নেওয়ার কথা জবানবন্দিতে বলেন এবং লিখিত দেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা সরকারি চাকুরীজীবি হওয়ায় বিষয়টি কাস্টমসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় এবং ঢাকা কাস্টমস কমিশনারের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দারের জিম্মায় এপিবিএন অফিস থেকে সুস্থ শরীরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নিমিত্তে হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন>> বদলির পরেও বিএডিসির চেয়ার আঁকড়ে আব্দুস সামাদ!
এরপর উদ্ধারকৃত সোনার বারটি অভিযোগকারী যাত্রী মহিবুর রহমানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যার ওজন ১১৬ গ্রাম। বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।
তবে এপিবিন থেকে পিংকু রায়ের বিরুদ্ধে কাস্টমস ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
তবে এ বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায় বাংলাবার্তাকে বলেন, সোনার বারটি আমার কাছে ছিলো। আমি অফিসে রাখি। এরপর এপিবিএন থেকে ফোন দিলে আমি এপিবিএনে সোনার বারটি হস্তান্তর করি। আপনি সোনারবারি অসৎ উদ্দেশ্যে লাথি মেরে পকেটে তোলেন এবং বারটি নিয়ে বাসায় চলে যান, এই প্রশ্ন করলে তিনি ফোনটি কেটে দেন এবং ফোন বন্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিবিএনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাংলাবার্তাকে বলেন, ঘটনাটি সত্য। কাস্টমস কর্মকর্তাকে শনাক্ত করে তার কাছ থেকে সোনার বারটি উদ্ধার করা হয়। এরপর অভিযোগকারী যাত্রীকে তার সোনার বারটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
তবে এ ঘটনার বিষয়ে কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
বাংলাবার্তা/এসজে