ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: রফতানি নিষিদ্ধ পণ্য রফতানির মাধ্যমে একটি পণ্যের চালান সমুদ্র পথ চট্টগ্রাম দিয়ে আমেরিকাতে যাওয়ার অনুমতি দেয় আইসিডি কাস্টম হাউস। এমনকি আইসিডি কাস্টম হাউসের কাস্টম কর্মকর্তারা পণ্যের চালানটির কায়িক পরীক্ষা করে কায়িক প্রতিবেদনে সবকিছু সঠিক রয়েছে বলে জানান।
আর কায়িক প্রতিবেদনে আইসিডি কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা আমেরিকাতে পণ্যের চালানটির রফতানি করার অনুমতির জন্য সুপারিশও কায়িক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন>>গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি
তবে শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ভয়াবহ তথ্য। রফতানি আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারের শঙ্কাও রয়েছে বলে শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এছাড়া রফতানির আড়ালে নিষিদ্ধ পণ্যের চালান আমেরিকাকে করা হচ্ছিলো বলে জানিয়ে শুল্ক গোয়েন্দার অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পক্ষে যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুর রহমান আইসিডি কাস্টম হাউসের কমিশনারকে রফতানিকারক রাজ কামালের এভারবেস্ট ও সিএন্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা তথা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন>> ৩৫শ টাকা বেতনের চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রফতানিকারক রাজ কামাল এভারবেস্ট করপোরেশন আইসিডি কাস্টম হাউস দিয়ে একটি পণ্যের চালান আমেরিকাতে রফতানি হবে। পণ্যের চালানটি চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি আইসিডি কাস্টম হাউস থেকে কায়িক পরীক্ষা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে যায়। এরপর শুল্ক গোয়েন্দা চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রফতানি করার পণ্যের চালানটির আবার শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে। শুল্ক গোয়েন্দার করা সেই কায়িক পরীক্ষায় উঠে আসে আইসিডি কাস্টম হাউসে ভুল কায়িক পরীক্ষা করা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে দেখা যায়, রফতানি হওয়া পণ্যের চালানটিতে পণ্যের পরিমাণ ঘোষণার চেয়ে ৬৬৬২.২ কেজি কম পাওয়া যায়। রপ্তানিকারক রাজ কামাল এভারবেস্ট করপোরেশন কেক, সেমাই ও বিস্কুট সহ অন্যান্য পণ্য ঘোষণা দিয়ে ৭ হাজার ৩ শত ৮০ কেজি কাটারিভোগ চাল পাওয়া যায়। যা রফতানি নীতি ২০২১-২৪ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া কাস্টম আইন ১৯৬৯ এর সেকশন ২(এস) মোতাবেক চোরাচালানের আওতাভুক্ত এবং কেশন ৩২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সাথে বিষয়টি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১৫ মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আরও পড়ুন>> বদলির পরেও বিএডিসির চেয়ার আঁকড়ে আব্দুস সামাদ!
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বিকে গ্রি টোস্ট, বিকে প্লাইন টোস্ট, ব্রেকাস কেক রাস্ট, ব্রেকাস প্রিমিয়ার গ্রি টোস্ট, ব্রেকাস মুড়ি টোস্ট, ব্রেকাস স্পেশাল টোস্ট, ব্রেকাস সুইট টোস্ট, ব্রেকাস টি টোস্ট, রাজ কামাল পেস, রাজ কামাল লাচ্ছা সেমাই, নান্না রেড ফাফেড রাইচ, রাজ কামালরাইচ ফ্লর, রাজ কামাল বাসিল, রাজ কামাল মাস্টার্ড তেল, রাজ কামাল গমের আটাঘোষণা দিয়ে আমেরিকাতে রফতানির চেষ্টা করে। কিন্তু পণ্যের চালানটিতে ঘোষণা বহির্ভূত ও রফতানি নিষিদ্ধ ৭৩৮০ কেজি কাটারিভোগ চাল পাওয়া যায়।
আরও জানা যায়, এছাড়া শুল্ক গোয়েন্দা পণ্যের চালানটির রফতানি কার্যক্রম স্থগিত করে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি পণ্যের চালানটির কায়িক পরীক্ষণের জন্য তারিখ নির্ধারণ করে। কিন্তু কায়িক পরীক্ষণের জন্য সিএন্ডএফ এজেন্ট লিটন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে বারবার অবহিত করা হলেও সিএন্ডএফ এজেন্ট নানা কালক্ষেপন করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে পণ্যের চালানটির কায়িক পরীক্ষণ করে শুল্ক গোয়েন্দা। যার ফলে সিএন্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে কাস্টম আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে শুল্ক গোয়েন্দা।
আরও পড়ুন>> মিথ্যা ঘোষণায় কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে নভোএয়ারের ৩০ পণ্যের চালান
এছাড়া পণ্যের চালানটি আইসিডি কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি কায়িক পরীক্ষা করে। যেখানে কায়িক পরীক্ষণ হিসেবে রাজস্ব কর্মকর্তা কাজী আখতারুজ্জামান এবং একজন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে। সেই কায়িক পরীক্ষণে বলা হয়েছে, পণ্যের চালানটির মোট গ্রোস ওয়েট ১৬৬৮৬.৩০ কেজি এবং নেট ওয়েট ১৫৩৯১.২০ কেজি। এছাড়া দাখিলকৃত ইনভয়েস,প্যাকেজিং লিস্ট মোতাবেক সিএন্ডএফ প্রতিনিধি মো. নাজিম হাওলাদারের উপস্থিতিতে পণ্য চালানটির পরীক্ষা করে ইনভয়েস ও প্যাকেজিং লিস্ট মোতাবেক সঠিক পাওয়া গিয়েছে। পণ্য চালানটি আইসিডি কমলাপুর থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমেরিকাকে রফতানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
তবে শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধান বলছে, আইসিডি কমলাপুর হাউসের কায়িক প্রতিবেদনে কাটারিভোগ চালের বিষয়টি উল্লেখ নেই। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দার কায়িক প্রতিবেদনে ঘোষণা বর্হিভূত ও রফতানি নিষিদ্ধ ৭৩৮০ কেজি কাটারিভোগ চাল পাওয়া গিয়েছে। এ বিষয়ে আইসিডি কাস্টম হাউসের পরীক্ষণ সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা।
আরও পড়ুন>> নিয়ম ভঙ্গ করে বৈমানিক ফারিয়ালের ফ্লাইট পরিচালনা
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শুল্ক গোয়েন্দা চালানটি এ দপ্তর হতে স্থগিত করার পর রফতানিকারক এ দফতরে দাখিলকৃত আবেদনে উল্লেখ করেন, ভুলক্রমে ঘোষিত ইনভয়েসের স্থলে তাদের অপর একটি প্রতিষ্ঠান রাজ কামাল খামার বাড়ি লিমিটেডের ইনভয়েসের পণ্য ষ্টোর থেকে শিপমেন্টের জন্য লোড করা হয়। পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত কমার্শিয়াল ইনভয়েসের সত্যতা জানতে চেয়ে ইসলামী ব্যাংকের নিকট ই-মেইল প্রেরণ করা হলে উক্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ই- মেইলের মাধ্যমে জানান, বর্ণিত ইনভয়েস (ইনভয়েস নং - আরকে/ এসএএফ/ ০৭-২০২৩, তারিখ ০৪.০১.২০২৪) সহ এই প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের কোন কার্যক্রম নেই।
এ বিষয়ে জানতে আইসিডি কাস্টম হাউসের কমিশনার আকবর হোসেনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানান সম্ভব হয়নি।
বাংলাবার্তা/এসজে