ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: টেকনাফ শুল্ক স্টেশনে বিভিন্ন পণ্য আমদানির মাধ্যমে গত এক বছরে শুল্ক পরিশোধ ছাড়া ৮ হাজার ৩০১ টন আমদানি পণ্য খালাস করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফ শুল্ক স্টেশন, ইউনাইটেড পোর্টল্যান্ড লিমিটেড ও অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে কারচুপির সত্যতা পেয়েছে।
আরও পড়ুন>>গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি
তবে এই ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা কাস্টম বা ভ্যাট কর্মকর্তাদের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তাদের দায়মুক্তি দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, কাস্টম বা ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজস ছাড়া কোনভাবেই বন্দর কর্তৃপক্ষের অনিয়ম করার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন>>অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন বৈমানিক মাসুদ
মায়ানমার থেকে আসা আদা, পেঁয়াজ, তেঁতুল, আচার, নারিকেল, কাঁচা মাছ ইত্যাদি ট্রলার থেকে সরাসরি ট্রাকে উঠানো হয়। আর এসব কাজ কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হয়। কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজস ছাড়া কোন পণ্য বন্দরের বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ওজনে কারচুপির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটলে তা বন্দর-কাস্টমসের যোগসাজসেই ঘটেছে। অথচ শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে এসবের কিছুই উল্লেখ নেই। এমনকি কক্সবাজার ভ্যাট সার্কেলে রক্ষিত কম্পিউটার থেকে তথ্য ডিলিট হওয়ার যটনায় কারা জড়িত সেই বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।
আরও পড়ুন>> মিথ্যা ঘোষণায় কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে নভোএয়ারের ৩০ পণ্যের চালান
এদিকে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেকনাফ শুল্ক স্টেশনে পণ্য আমদানির তথ্য জানতে শুল্ক গোয়েন্দা চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ইউনাইটেড পোর্টল্যান্ডের অফিসে অভিযানে যায়। এরপর সেখানে গিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা জানতে পারে ১৬ জানুয়ারি মানে একদিন আগে চট্টগ্রাম ভ্যাটের ১৫ সদস্যের একটি দল সেখানে তল্লাশি চালিয়ে ওজন স্কেল সংশ্লিষ্ট চারটি সিপিইউ ও একটি ল্যাপটপ জব্দ করে নিয়ে গিয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি কক্সবাজার ভ্যাট অফিসে বন্দর অপারেটরের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও ওজন স্কেলের সুপারভাইজারের উপস্থিতিতে জব্দ সিপিইউ চালু করে দেখতে পায় ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে ওজন স্কেলের সফটওয়্যার ‘স্কেল ওয়েট’ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সব তথ্য কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> বিকাশ-নগদে নিষিদ্ধ বেটিংয়ের রমরমা ব্যবসা
এই তথ্য উদ্ধারে কক্সবাজার থেকে আইটি এক্সপার্ট নেওয়া হলেও মুছে ফেলা তথ্য আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ যে দিন দুপুরে শুল্ক গোয়েন্দা ইউনাইটেড পোর্টল্যান্ডের অফিসে হানা দেয়, সে দিন সন্ধ্যায় ‘স্কেল ওয়েট’ সফটওয়্যার থেকে তথ্য মুছে ফেলা হয়। ভ্যাটের হেফাজতে জব্দ কম্পিউটার থেকে কীভাবে তথ্য মুছে ফেলা হলো সেবিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কিছুই বলেনি এমনকি কাস্টম ও ভ্যাটের কর্মকর্তাদের বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে চট্টগ্রাম ভ্যাট শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে।
আরও পড়ুন>> আইসিডি কাস্টমসের তেলেসমাতি, নিষিদ্ধ পণ্য আমেরিকাতে রফতানির অনুমতি
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের (টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বে) যুগ্ম-কমিশনার শাকিল বাংলাবার্তাকে বলেন, আমরা টেকনাফ শুল্ক স্টেশন থেকে দুটি নষ্ট এবং দুটি ভালো কম্পিউটার এবং ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করি। আমাদের অভিযানের পরদিন শুল্ক গোয়েন্দা অভিযান পরিচালনা করে। শুল্ক গোয়েন্দা এবং আমাদের উভয়েরই উদ্দেশ্যে এক। শুল্ক গোয়েন্দা যেভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটা সঠিক নয়।
আরও পড়ুন>> ৩৫শ টাকা বেতনের চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক
শুল্ক ছাড়া তাহলে কি পণ্য পোর্ট থেকে পণ্য বেরিয়ে যায়নি তা শুল্ক ফাঁকি হওয়ার মত ঘটনা ঘটেনি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের অনুসন্ধানে এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে পদ্ধতিগত কিছু ভুল আমরা পেয়েছি। শুল্ক গোয়েন্দা কম্পিউটার থেকে তথ্য ডিলিটের যে কথা বলছে আমরাও আমাদের অনুসন্ধানে সেই তারিখের কোন তথ্য পায়নি। আমরাও চেষ্টা করেছি কিন্তু ঐ তারিখের কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারিনি। এরপর পোর্টের জিএমকে চিঠি দেওয়া হয়, তাদের থেকে পাওয়া তথ্যে আমরা আশানুরূপ ফাঁকি পায়নি। শুল্ক গোয়েন্দার ক্যালকুলেশনের ভুল রয়েছে। তবে শুল্ক গোয়েন্দা যে পণ্য শুল্ক ছাড়া বেরিয়ে গেছে বলে বলছে সেটা বন্দর কর্তৃপক্ষ হিসাব দিতে পারবে। তবে এনবিআর এখন শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে যদি আমাদের ভুল পেয়ে থাকে তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে আমাদের অনুসন্ধানে শুল্ক ছাড়া পণ্য বেরিয়ে যাওয়ার কোন তথ্য আমরা পায়নি।
আরও পড়ুন>>অর্থ আত্মসাৎসহ নানা কেলেঙ্কারিতে বরখাস্ত সোনালী ইন্স্যুরেন্সের সিইও
অন্যদিকে এই বিষয়ে জানতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ম-পরিচালক সাইফুরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
বাংলাবার্তা/এসজে