ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ২১টি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ রয়েছে। কিন্তু আইএটিএ (IATA) নিয়ম অনুযায়ী যে পরিমাণ বৈমানিক প্রতিটি বিমানের জন্য থাকার কথা তার থেকে অনেক কম সংখ্যক বৈমানিক বর্তমানে বিমানে কর্মরত রয়েছে। বিমানে আন্তর্জাতিক রুটে প্রচুর পরিমাণে অভিজ্ঞ বৈমানিকের সংকট রয়েছে।
আরও পড়ুন>> বিদেশি বৈমানিকে ঝুঁকছে বিমান, প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে
বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন থেকে গত কয়েক বছর ধরে, বছরে এক হাজার ঘণ্টার পরিবর্তে ১২শ ঘণ্টার অনুমতি নিয়ে বৈমানিকদের দিয়ে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
আইকাউ, এফএএ, ইয়াসা এবং কাসা’র নিয়ম অনুযায়ী কোন দেশেই বাণিজ্যিক বিমান পরিচালনাকারী কোন বৈমানিকরা বছরে ৯শ থেকে-এক হাজার ঘণ্টার অধিক বিমান পরিচালনা করে না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শুধু ১২শ ঘণ্টায় নয় এর অতিরিক্ত সময়েও নিয়ম ভঙ্গ করে ফ্লাইট পরিচালনা করিয়েছে বলে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাননি বিমানের বৈমানিকরা।
আরও পড়ুন>> অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন বৈমানিক মাসুদ
পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের নিয়োগকৃত বিমানের পিওআই(প্রিন্সপল অপারেশন ইন্সপেক্টর) এবং অন্যান্য সিভিল এভিয়েশনের ইন্সপেক্টর দ্বারাও অনুসন্ধান করালেও ফ্লাইট ডিউটি টাইম ভায়োলেশনের কোন প্রমাণ যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছে সিভিল এভিয়েশন। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ বিমানের চিফ পাইলট প্লানিং এন্ড সিডিউল এর ক্যাপ্টেন ইশতিয়াজ নিজেই বিমানের এমডিসহ বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ই-মেইলের মাধ্যমে অবগত করেন, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম মেনে বৈমানিকদের সিডিউল করা সম্ভব হচ্ছে না। তথা এফডিটিএল(ফ্লাইট ডিউট টাইম লিমিটেশন) ভঙ্গ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> বিদেশি বৈমানিকের অনিয়মে নষ্ট হচ্ছে বিমানের সুনাম, গুনতে হচ্ছে জরিমানা
এমনকি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই অনিয়মের বিষয়টি আইকাউ(ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন) এর অডিটেও সম্প্রতি উঠে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের সঠিক নজরদারী না থাকার কারণে এই বড় বড় অনিয়মগুলো করার সুযোগ পাচ্ছে বিমান।
যেহেতু গত ২-৩ বছর ধরে বিমান বাংলাদেশ এফডিটিএল ভায়োলেশন, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, চেকিংয়ে বিমানের অনিয়ম থাকলেও সেগুলো দেখেও যেন না দেখার মত করে বসে আছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন।
আরও পড়ুন>> আইসিডি কাস্টমসের তেলেসমাতি, নিষিদ্ধ পণ্য আমেরিকাতে রফতানির অনুমতি
এই আইন ভঙ্গ করা এতোবড় অপরাধ যে, প্রতিটি বৈমানিক এবং বিমান সংস্থাকে মর্ডারেট পেনাল্টি করার বিধান রয়েছে। এমনকি বিমান পরিচালনা সংস্থার অনুমতিপত্র বাতিল পর্যন্ত করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে সিভিল এভিয়েশনের। নিয়ম বর্হিভূতভাবে অত্যাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করায় বাংলাদেশ বিমানের বহু বৈমানিক হার্ট এ্যাটাক এবং শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এমনকি অসুস্থ শরীর নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট পরিচালনা করার দৃষ্টিান্ত রয়েছে বিমানের বৈমানিকদের। যার ফলে মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিমানের বৈমানিকরা।
আরও পড়ুন>> অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে ২ যুগ ধরে বৈমানিক মাসুদ
অপরদিকে একজন বৈমানিক মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থতা নিয়ে যখন ফ্লাইট পরিচালনা করে তখন উড়োজাহাজ এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। এমনকি গত ১৬ মার্চ বিমান উড্ডয়নের পর কলকাতার আকাশে এক বৈমানিক অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে বিমানটি আবার ঢাকায় ফেরত আসে এবং ৬ ঘণ্টা বিলম্বে ফ্লাইটটি আবার যাত্রা শুরু করে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একাধিক বৈমানিকরা বলেন, অসুস্থতা থাকার পরও বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। বৈমানিক স্বল্পতা তো রয়েছেই বিমানে।
আরও পড়ুন>> শাহজালালে সোনা চুরির ঘটনায় কাস্টমস কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
আরও পড়ুন>> জিআই তার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি
এ বিষয়ে বিমানের চিফ পাইলট এন্ড সিডিউল এর ক্যাপ্টেন ইশতিয়াজকে ফোন দেওয়া হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
যদিও এ বিষয়ে বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন্স ক্যাপ্টেন সিদ্দিক বাংলাবার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না। আপনি আমাদের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাই এটার ভালো সদুত্তর দিতে পারবে।
তবে এ বিষয়ে জানতে বিমানের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে বিমান জনসংযোগ মহাব্যবস্থাপকের নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে টেকনাফে সাগর চুরি
অন্যদিকে সিভিল এভিয়েশনের প্রিন্সপল অপারেশন্স ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন ফরিদুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গিয়েছে। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাবার্তা/এসজে