ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে একটি বিলঅবএন্ট্রির মাধ্যমে আমদানিকারক কুইন্স হেলথকেয়ার বিভিন্ন সামগ্রী আমদানির মাধ্যমে সরকারের ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের নজরদারির ফলে এই শুল্ক করাদি ফাঁকি উদঘাটন হয়েছে।
আরও পড়ুন>> আইসিডি কাস্টমসের তেলেসমাতি, নিষিদ্ধ পণ্য আমেরিকাতে রফতানির অনুমতি
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বাংলাবার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, একটি মাত্র বিলঅবএন্ট্রি যার নাম্বার ২৬৬৬২১। এই বিলঅবএন্ট্রির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকারক কুইন্স হেলথকেয়ার লাইটিং প্যানেল ও হাসপাতালের সরঞ্জাম আমদানি করে। পণ্য চালানটির পরীক্ষণ করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার কাওসার আলম পাটোয়ারি। এছাড়া কায়িক পরীক্ষা করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা দীপান্বিতা দে মনীষা (শুল্কায়ন সেকশন-৬), সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা (শুল্কায়ন সেকশন-৬) সজীব তালুকদার, সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মো আবু নাঈম, সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়।
এছাড়া শুল্কায়ন করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার অনুরূপা দেব। এছাড়া রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে শুল্কায়ন করেন তুহিন চৌধুরী (শুল্কায়ন সেকশন-৬) ও সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে শুল্কায়ন করেন ফারুক আহমেদ (সেকশন-৬)। এই সবার যোগসাজসে এই বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি সংগঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন>> এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ফিরিস্তি
এদিকে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষন ও শুল্কায়ন শেষে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা শুল্ককর আদায় হয়। সকল প্রক্রিয়া শেষে এক্সিট নোট হয়ে পণ্যচালানটি ১০ টি ট্রাকে লোড করা হয়। এসময় গোপন সংবাদ পেয়ে গেটে ট্রাকগুলো আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা।
এদিকে গোয়েন্দার পরীক্ষনে বর্ণনা ও ওজনে ব্যাপক মিথ্যা ঘোষণা সনাক্ত হয়। বিচারাদেশে কাস্টম হাউজ, চট্টগ্রাম হতে ২ কোটি ৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত শুল্ককর আদায় এবং ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় আমদানিকারককে এছাড়া আরও অন্যান্য জরিমানা করা হয় ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ শুল্ক গোয়েন্দার হস্তক্ষেপের ফলে এই একটি চালান হতে মোট ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে।
আরও পড়ুন>> শাহজালালে সোনা চুরির ঘটনায় কাস্টমস কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
জানা যায়, পণ্যের চালানটি ফেব্রুয়ারি মাসে চীন থেকে ২৮ ধরনের মেডিক্যাল সরঞ্জামসহ আমদানি করে সিলেটের কুইন্স হেলথকেয়ার। পণ্যের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর খালাসের দায়িত্বে নিয়োজিত সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ কাগজপত্র চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দাখিল করে। মিথ্যা তথ্য থাকায় এবং পরীক্ষণ ও শুল্কায়নে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য থাকার গত ১৪ মার্চ পণ্যগুলো পরীক্ষা করে শুল্ক গোয়েন্দা ওতদন্ত অধিদফতর। এরপর ঘোষণা বর্হিভূত ১০ টন বেশি পণ্য পাওয়া যায়। একটি বিলঅবএন্ট্রিতে এত বড় ফাঁকি যা অস্বাভাবিক বলছে শুল্ক গোয়েন্দা।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে টেকনাফে সাগর চুরি
এদিকে কাস্টম সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই উপ-কমিশনার এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ছাড়া এই ধরনের বড় অনিয়ম সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, এখানে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি এই ঘটনা ঘটার পর এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কিংবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এদিকে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে পরীক্ষণ ও শুল্কায়নে যারা রয়েছেন তাদের কাছে ব্যাখা তলবের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন>> জিআই তার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ও পণ্য চালানটির পরীক্ষণ কর্মকর্তা উপ-কমিশনার কাওসার আলম পাটোয়ারির ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেনি। এমনকি ফোনে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বাংলাবার্তা/এসজে