ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: চলতি বছরের ১৬ এবং ২১ শে জানুয়ারি বাংলাবার্তার বিশেষ প্রতিনিধি শেখ জাহিদুজ্জামান বৈমানিক মাসুদকে নিয়ে দুটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করেন। যার শিরোনাম যথাক্রমে: ‘অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে ২ যুগ ধরে বৈমানিক মাসুদ এবং অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন বৈমানিক মাসুদ’। এই দুটি সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বৈমানিক নুর উদ্দিন আহমেদ আল মাসুদ।
আরও পড়ুন>> অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে ২ যুগ ধরে বৈমানিক মাসুদ
প্রতিবাদ লিপিতে তিনি যা বলেছেন হুবহু বাংলাবার্তার পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো:
আপনার বাংলা বার্তা অনলাইন পোর্টালে গত ১৬ই জানুয়ারী ২০২৪ এবং ২১শে জানুয়ারী ২০২৪ তারিখে “অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে ২ যুগ ধরে বৈমানিক মাসুদা এবং “অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন বৈমানিক মাসুদ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দুটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে জনাব শেখ জাহিদুজ্জামান (বিশেষ প্রতিনিধি) আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানহানিকর, ভিত্তিহীন, মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভাবমূর্তি বিনষ্টকার তথ্য উপস্থাপন করেছেন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন>> অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন বৈমানিক মাসুদ
আপনাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ২১ দিনে ১৩৩ ঘন্টা এবং ৭ দিনে ১১৮ ঘন্টা ফ্লাইং করা হয়েছে যা সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বিভ্রান্তীকর তথ্য। এখানে উল্লেখ্য ১৩৩ ঘন্টা ANO- A10 অনুযায়ী (৪৪ দিনে) ফ্লাইং করা হয়েছে এবং CAR 84 রুল্স 57,4B এবং 5 অনুযায়ী লগবুকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। উক্ত ১৩৩ ঘন্টা ফ্লাইং এর সার্টিফিকেট ওরিয়েন্ট এভিয়েশন প্রদান করেন এবং ফিলিপিন্স সিভিল এভিয়েশন ১৩৩ ফ্লাইং ঘন্টা CPL লাইসেন্স প্রদানের জন্য সত্যয়িত করে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের কাছে প্রেরন করেন।
আপনার পত্রিকাতে উল্লেখিত, ২১১ ঘন্টা ফ্লাইংয়ের কোন প্রমান সিভিল এভিয়েশনে দেখাতে পারা যায় নাই বলে যে সংবাদটি প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। ২১১ ঘন্টা CAR 84 রুল্স 57,4B অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যা বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন যাচাই পূর্বক তার সত্যতা পেয়েছে।
আরও পড়ুন>> আইসিডি কাস্টমসের তেলেসমাতি, নিষিদ্ধ পণ্য আমেরিকাতে রফতানির অনুমতি
বৈধ রেটিং ছাড়া যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনা করার তথ্যটিও সম্পূর্ন মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রোনদিত। উক্ত সময় রেটিংয়ের জন্য প্রশিক্ষণরত ছিলাম।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আপনার প্রতিনিধি উদ্দেশ্যমূলক ভাবে, আমার ভাবমূর্তীক্ষুন্ন এবং আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে একটি জাল, বানোয়াট ও সৃজিত সার্টিফিকেট পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন যা আমার আসল সার্টিফিকেট এর সাথে কোন মিল নাই।
আরও পড়ুন>> এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ফিরিস্তি
একজন আইনমান্যকারী নাগরিক হিসেবে সমাজে এবং আত্নীয় পরিজনদের কাছে আমার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টার উদ্দেশ্যেপ্রনোদিতভাবে অনুমান নির্ভর, মিথ্যা, বানোয়াট, আপত্তিকর বক্তব্য ও তৃতীয় পক্ষের কাউকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে এই বিভ্রান্তীকর বক্তব্য আপনার অনলাইন পোর্টালে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আপনার অনলাইন পোর্টাল 'বাংলা বার্তা'- য় প্রকাশিত আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং উক্ত বাংলা বার্তা ' অনলাইন পোর্টালের প্রকাশক ও সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষন করছি যেন 'বাংলা বার্তা' এর পক্ষ থেকে উপযুক্ত বক্তব্য প্রকাশ করা হয় এবং লিখিতভাবে ক্ষমা চাওয়া হয়। অন্যথায়, আমার আইনজীবীর মাধ্যমে আইনগত বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন>> শাহজালালে সোনা চুরির ঘটনায় কাস্টমস কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
এদিকে প্রতিবাদ লিপিতে বৈমানিক মাসুদ বলেছেন, তিনি ১৩৩ ঘণ্টা ANO_A10 অনুযায়ী (৪৪ দিনে ফ্লাই করেছেন এবং CAR 84 রুলস এর ৫৭,৪বি এবং ৫ অনুযায়ী লগবুকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন প্রেরিতপত্রে ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশনের কাছে ক্যাপ্টেন মাসুদ এর ফ্লাইং শুরুর তারিখ চাওয়া হলে ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশন জানায়, ক্যাপ্টেন মাসুদকে ফিলিপাইনে ট্রেনিংয়ের অনুমোদনের তারিখটি দেওয়া হয় ২০০১ সালের ২৭ মার্চ থেকে ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এছাড়া বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের কাছে ক্যাপ্টেন মাসুদের দাখিল করা ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে প্রেরিত ফিলিপাইনের লগবুক কপিতে সবশেষ ফিলিপাইনে ফ্লাইংয়ের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০০১ সাল। উক্ত সময়ে ক্যাপ্টেন মাসুদ ১৩৩ ঘণ্টা ১২ মিনিট ফ্লাইং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। যার মধ্যে ২০০১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট এবং ২০০১ সালের ২৭ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১১৮ ঘণ্টা ১৮ মিনিট উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছেন। যা অবাস্তব বলছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন। এছাড়া ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত কোনভাবেই ৪৪ দিন হয় না। ফলে প্রতিবাদ লিপিতে পাঠানো তথ্য সঠিক নয়।
প্রতিবাদ লিপিতে ক্যাপ্টেন মাসুদ আরও বলেছেন, ১৩৩ ঘণ্টা ফ্লাইং এর সার্টিফিকেট ওরিয়েন্ট এভিয়েশন প্রদান করেন এবং ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশন ১৩৩ ঘণ্টা ফ্লাইং CPL লাইসেন্স প্রদানের জন্য সত্যায়িত করে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের কাছে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে টেকনাফে সাগর চুরি
প্রতিবেদকের বক্তব্য: ক্যাপ্টেন মাসুদের ১৩৩ ঘণ্টার সার্টিফিকেট নিয়ে যেখানে ২০০১ সালের ২৭ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১১৮ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ফ্লাইং করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে সেটি নিয়ে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন নিজেই ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশনের কাছে ১৩৩ ঘণ্টার সার্টিফিকেটের বৈধতা জানতে চেয়েছেন। এমনকি ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশন এই ১৩৩ ঘণ্টার বৈধতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের কাছে। এছাড়া বিশ্বের কয়েকটি নামকরা ফ্লাইংস্কুল এবং এভিয়েশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যেখানে, ট্রেনিংরত কোন বৈমানিক সাধারণত দিনে ৩-৫ ঘন্টার বেশি ফ্লাইং করে না। সেখানে ৯ দিনে ১১৮ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ফ্লাইং অসম্ভব এবং অবাস্তব। একই সাথে ক্যাপ্টেন মাসুদ বাংলাদেশ এয়ার পারাবতে প্রশিক্ষণে থাকার সময় ১৯৯৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০১ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে মাত্র ৬০ ঘণ্টা ৪০ মিনিট প্রশিক্ষণ তথা ট্রেনিং নিয়ে ছিলেন। যার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা লোকাল স্লো ফ্লাইং এবং ৮ ঘন্টা ৫৫ মিনিট নেভিগেশন স্লো ফ্লাইং সম্পন্ন করেছিলেন। যেখানে ক্যাপ্টেন মাসুদের ৬০ ঘণ্টা ফ্লাইং করতে ১ বছর ৪ মাস সময় লেগেছে সেখানে ৯ দিনে ১১৮ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ফ্লাইং যা অসম্ভব এবং অবাস্তব।
প্রতিবাদলিপিতে ২১১ ঘণ্টা ফ্লাইংয়ের কোন প্রমাণ সিভিল এভিয়েশনে দেখাতে পারা যায় নাই বলে যে সংবাদটি প্রকাশ করেছে তা সম্পন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: ৩০ এপ্রিলের পরে ক্যাপ্টেন মাসুদ যে ২১১ ঘণ্টা ফ্লাইং করেছেন বলে যে দাবি করেছেন ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশনে তার কোন তথ্য নেই। এছাড়া ফিলিপাইনে ক্যাপ্টেন মাসুদের ফ্লাইং করার অনুমতি ছিলো ৩০ এপ্রিল ২০০১ সাল পর্যন্ত। ক্যাপ্টেন মাসুদ ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেন ২৭ এপ্রিল ২০০১ সাল এবং বাংলাদেশে পৌঁছান ৩০ এপ্রিল ২০০১ সাল। ক্যাপ্টেন মাসুদের পাসপোর্ট নাম্বার Q0128364 অনুযায়ী। এমনকি পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন মাসুদ ফিলিপাইনে গিয়েছেন এমন কোন তথ্য বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের কাছে ক্যাপ্টেন মাসুদ দেখাতে পারেননি। এমনকি ৩০ এপ্রিল ২০০১ সাল এর পর ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশন ক্যাপ্টেন মাসুদকে ফিলিপাইনে ফ্লাইং করার জন্য তাকে কোন অনুমতিও দেওয়া হয়নি।
বৈধ রেটিং ছাড়া যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনা করার তথ্যটি সম্পন্ন মিথ্যা ও উদ্দেশ্যে প্রণোদীত
প্রতিবেদকের বক্তব্য: এনডোর্সমেন্ট ছাড়া কোন রুট ট্রেনিং করা যায় না। এছাড়া এনডোর্সমেন্টন পেতে হলে একজন বৈমানিককে বিমানে বেজ ট্রেনিং,গ্রাউন্ড ট্রেনিং সম্পন্ন করে এবং বেজ চেকে পাশ করে রুট ট্রেনিং শুরু করতে হয়। এছাড়া ক্যাপ্টেন মাসুদের লাইসেন্সে DHC-2 বিমানে কোন এনডোর্সমেন্ট বা বেজ ট্রেনিং করেননি। সুতরাং ক্যাপ্টেন মাসুদের দাবিকৃত ৭৬২ ঘণ্টা ড্যাস-২ বিমানে সিভিল এভিয়েশন কোনভাবেই গ্রহন করেনি। যা CPD এর ৩১ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ এবং যার শাস্তি লাইসেন্স বাতিল।
একই সাথে সংবাদটিতে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের বক্তব্য,বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন এবং ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশন থেকে পাওয়া তথ্য, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের অনুসন্ধানের তথ্য যাচাই বাছাই করে এবং বিভিন্ন বিভাগের সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে এবং বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সংবাদগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে কাউকে ছোট করার জন্য বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়নি বা প্রতিবেদকের নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে করা হয়নি।
বাংলাবার্তা/এসজে