ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: সিভিল এভিয়েশনকে রীতিমত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গত ২৯ এপ্রিল ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিমান তাদের অপারেশনাল ম্যানুয়ালের সাথে সাংঘর্ষিক যোগ্যতা দিয়ে বৈমানিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাবার্তার অনুসন্ধানে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেটি শুধু বিমানের অপারেশন ম্যানুয়ালের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, এটি বিমান পরিচালনার লাইসেন্সের জন্য যে যোগ্যতার মাপকাঠি দেওয়া রয়েছে তার সাথে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কার ৮৪ এর আইন ২৪ (বি) তে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। বিমানে বৈমানিক হিসেবে কোন প্রার্থীকে আবেদন করতে হলে তাকে পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতসহ এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হতে হবে অথবা বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড থেকে দেওয়া সমমানের শিক্ষা সনদ থাকতে হবে।
শুধু তাই নয়, এই বিষয়টি বিমানের অপারেশনাল ম্যানুয়াল (ওএমএ) এর ২.১.৪.৭.৩(১) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে সম্প্রতি বিমানের প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সেটি উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে প্রকাশিত বিমানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১ এর ২ নাম্বার রোমানে, আবেদন প্রার্থীদের আবেদনের ক্ষেত্রে ইংরেজি মাধ্যমের এ লেভেলের কথা বলা থাকলেও বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড থেকে ইস্যুকৃত সমমানের শিক্ষা সনদ চাওয়া হয়নি। তবে ১ এর ২ নাম্বারে রোমানের ৩এ জিইডি’র জন্য চাওয়া হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করলে তাদেরকে বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড থেকে সমমানের শিক্ষা সনদ নিতে হয়। যেমন, জিইডি এর কোন শিক্ষা সনদ বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড দেয় না। কারণ এটি বাংলাদেশের এইচএসসি সিলেবাসের কারিকুলাম মানদন্ডে অপ্রতুল। একই সাথে এ লেভেলে ডি গ্রেডের কম পেলে বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড সেই শিক্ষার্থীদের কোন শিক্ষা সনদ প্রদান করে না।
তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিমানের সাবেক এক বৈমানিক বলেন, কার ৮৪ আইন অনুযায়ী জিইডি এবং এ লেভেলে গণিত ও পদার্থে ডি গ্রেডের থেকে কম নাম্বার প্রাপ্ত প্রার্থীদের সিপিএল (কর্মাশিয়াল পাইলট লাইসেন্স) দেওয়া কথা না। কিন্তু বহু বৈমানিক রয়েছেন যারা উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই কর্মাশিয়াল পাইলট লাইসেন্স এবং এয়ারলাইন্স পাইলট লাইসেন্স পেয়েছেন।
এদিকে বিমানের অপারেশনাল ম্যানুয়াল পার্ট এ এর ২.১.৪.৭.৩ এর ১ নাম্বার রোমানে শিক্ষাগত যোগ্যতা রিভিশন ৪১ নাম্বারে (২১ জুলাই ২০২১) দেওয়া রয়েছে, এ লেভেলে কমপক্ষে বি গ্রেড থাকতে হবে আর এইচএসসিতে ২.৪ গ্রেড থাকতে হবে। কিন্তু ২০২৩ সালের আগস্টে বিমানের ৪৮ রিভিশনে সেটা কমিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা কার ৮৪ অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, বাংলা মাধ্যমে পাশ করলেই হবে আর ইংরেজি মাধ্যমে এইচএসসি সমমানের বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড থেকে শিক্ষাসনদ নিতে হবে।
এদিকে অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, সম্প্রতি বিমানের প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এইচএসসিতে শিক্ষাযোগ্যতা এ মাইনাস চাওয়া হলেও ইংরেজি মাধ্যম এ লেভেলে সি গ্রেড চাওয়া হয়েছে। তবে এ লেভেলের জন্য বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড থেকে কোন সমমনা শিক্ষাসনদ চাওয়া হয়নি। আর এখানেই শুভঙ্করের ফাঁকির খেলাটি খেলেছে বিমান।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বাংলাবার্তাকে বলেন, যেখানে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ শিক্ষাগত যোগ্যতার নিয়ম না মেনে লাইসেন্স দিচ্ছে বৈমানিকদের। সেখানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির এই ভুল কিছুই না। একই সাথে এটি সিভিল এভিয়েশন আইনের পরিপন্থী হওয়ার পরও তারা চুপ করে বসে আছে। বরাবরই বিমানের নিয়োগে কিছু না কিছু অনিয়ম থাকে তবে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে কিছু না দেখার মত অবস্থায় বসে থাকেন।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিমকে ফোন দেওয়া হলে তিনি প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে ফোনের লাইনটি কেটে দেন। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক (এফএসআর) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আহসানকে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি।
একই সাথে সিভিল এভিয়েশনের সদস্য (এফএসআর) এয়ার কমডোর কাওসারকে ফোন দেওয়া হলে তিনিও কলটি রিসিভ করেননি।
যদিও এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বাংলাবার্তাকে বলেন, যেখানে কোন আবেদনকারী এ লেভেলে সি গ্রেড থাকলে তারা আবেদন করতে পারবে কিন্তু বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড থেকে সমমানের কোন শিক্ষা সনদ লাগছে প্রয়োজন নেই এটা তো অনিয়ম। কেননা এটা বিমানের আইন পরীপন্থী। একই সাথে সিভিল এভিয়েশনের কার ৮৪ এর রুলস ২৪ (বি) পরীপন্থী। শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই পরিচালন করতে হবে। পরবর্তীতে এটা নিয়ে অডিট হলে নিয়োগ বাতিলও হতে পারে। ফরম্যাটের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষসহ সিভিল এভিয়েশনেরও তদারকি করা প্রয়োজন।
তবে এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যার এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বাংলাবার্তাকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত না। এই বিষয়ে জেনে যদি কোন আইনের ব্যত্যয় ঘটে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে