ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: ক্যাপ্টেন মাসুদের অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে সকল তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরও তদন্ত দীর্ঘায়িত করে অপরাধগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে সিভিল এভিয়েশনের একটি চক্র। এমনকি সেই পক্ষটি ক্যাপ্টেন মাসুদকে নিদোর্ষ প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছে বলেও জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে টেকনাফে সাগর চুরি
বাংলাবার্তার অনুসন্ধান বলছে, প্রাথমিক তদন্তে মাসুদের বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়লে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান নিজ উদ্যোগ নিয়ে ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশনের ডিজির (মহাপরিচালক) কাছে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে, ক্যাপ্টেন মাসুদের ফিলিপাইনে প্রশিক্ষণের সবগুলো সার্টিফিকেট এবং ৯দিনে ১১৮ ঘণ্টা ফ্লাইং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করাসহ এবং কবে থেকে ফিলিপাইনে প্রশিক্ষণের অনুমতি পেয়েছেন সকল তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
আরও পড়ুন>>গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি
বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন সূত্রে আরও জানা যায়, ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশন থেকে গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিটি তথ্যের উত্তরসহ সকল সার্টিফিকেট এবং প্রমাণসহ বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠির মাধ্যমে প্রদান করে ফিলিপাইন সিভিল এভিয়েশনের ডিজি এন্টিও। তথাপি বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান যেসব বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন ফিলিপাইন থেকে সেসব উত্তর পাওয়ার পর স্পষ্ট হয় ক্যাপ্টেন মাসুদ অনিয়ম এবং দুর্নীতি করেছিলেন।
এদিকে ক্যাপ্টেন মাসুদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সকল প্রমাণ এবং তথ্যাদী থাকার পরও কোন এক অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতাবলে মাসুদের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আটকে রেখে সময়ক্ষেপন করার পাশাপাশি গড়িমসি করছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। একই সাথে মাসুদের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতি পাওয়া গিয়েছে সেগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও করছে সেই চক্রটি।
আরও পড়ুন>> মিথ্যা ঘোষণায় কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে নভোএয়ারের ৩০ পণ্যের চালান
অপরদিকে গুঞ্জন রয়েছে এর আগের তদন্ত প্রতিবেদনে বিপুল পরিমাণ ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে ক্যাপ্টেন মাসুদের পক্ষে তদন্ত রিপোর্ট দেয় সিভিল এভিয়েশনের সেই তদন্ত কমিটি। যদিও পরে সিভিল এভিয়েশনের এক অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, মাসুদের অনিয়মের পরও তদন্ত সংশ্লিষ্ঠরা মাসুদের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছেন। এরপর নতুন করে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান আবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। আর সেই তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে মাসুদের সকল অনিয়ম বেরিয়ে আসলেও দুর্নীতিবাজ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাদের কারণে তদন্ত প্রতিবেদন অজানা কারণে টেবিলের নিচে ধামাচাপা পড়ে আছে। এমনকি তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসলেও সেটি সিভিল এভিয়েশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চাপে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সিভিল এভিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভিল এভিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তারা বাংলাবার্তাকে বলেছেন, সিভিল এভিয়েশনের বর্তমান চেয়ারম্যান খুবই দক্ষ এবং নিষ্ঠাবান একজন কর্মকর্তা। কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে নষ্ট হচ্ছে সিভিল এভিয়েশনের সুনাম। শুধু তাই নয়, সামনে আইকাউ অডিট রয়েছে। এভাবে অনিয়ম আর দুর্নীতি হতে থাকলে দেশের সুনাম যেমন নষ্ট হবে একই সাথে বড় বিপদে পড়তে পারে দেশ। যেখানে এভিয়েশন শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
এদিকে এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বাংলাবার্তাকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত। যতদূর জানি তদন্ত রিপোর্ট আমার কাছে এখনো আসেনি। ফিলিপাইনে চিঠি পাঠানো হয়েছিলো সেটার উত্তরও সম্ভবত এসেছে। এখানে দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও বিষয়টি আমি দেখবো কি অবস্থায় রয়েছে।
যদিও ক্যাপ্টেন মাসুদকে নিয়ে চলতি বছরের ১৬ এবং ২১ শে জানুয়ারি বাংলাবার্তায় দুটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হয়। যার শিরোনাম যথাক্রমে: ‘অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে ২ যুগ ধরে বৈমানিক মাসুদ এবং অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন বৈমানিক মাসুদ’।
বাংলাবার্তা/এসজে