ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি তথা মালয়েশিয়াতে লোক পাঠানোর নামে ৩৪৪ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। আর এই পাচার হওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন ইউনাইটেড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস.এম.রফিক।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সাড়ে ৬ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকারও বেশি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যদি সিন্ডিকেট না থাকতো তাহলে নেপালের মত ১ লাখ শ্রমিক বিনা খরচে মালয়েশিয়াতে পাঠাতে যেত। দেশের রাজস্ব খাত আরও অনেক লাভবান হতো বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে টেকনাফে সাগর চুরি
চিঠিতে যারা এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত তাদের চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের (আরএল-৫৪৯) রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান পার্টনার মো: আমিন নুর তারা প্রায় সর্বমোট তিনশত চুয়াল্লিশ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান টাকা বাংলাদেশ হতে শুধু মালয়েশিয়ান মার্কেটে অবৈধভাবে পাচার করেছেন। তাদের গডফাদারা লন্ডনে ও কানাডায় প্রতিষ্ঠিত।
আরও পড়ুন>>গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি
চিঠিতে রফিক আরও বলেছেন, মালয়েশিয়াতে বিনা খরচে প্রায় দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক নিয়োগ পেয়েছেন। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশী শ্রমিকরা বিনা খরচে মালয়েশিয়া যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। শুধু এই বিশেষ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের চাঁদার টাকা ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও তারা বিবেচনা করেননি। যদিও আমরা কিছু শ্রমিক বিনা খরচে মালয়েশিয়াতে পাঠাতে পারলেও তাতেও সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে শ্রমিক নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন>> ৩৫শ টাকা বেতনের চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক
গত দুইবারে বাংলাদেশ হতে প্রায় ২ লাখ প্রবাসী কর্মহীন ভাবে শুধু সিন্ডিকেটের হোতাদের লাভবান হওয়ার জন্য এই কর্মহীন ভিসায় শ্রমিকদের মালয়েশিয়ার গডফাদারদের মনোরঞ্জনে ও অবৈধ অর্থের লালসা মিটানোর জন্য পাঠানো হয়েছে। যাদের কর্মহীনতার জন্য দেশীয় বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সীদের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে ও এখনো হচ্ছে এবং বদনামের দায়বদ্ধতা নিতে হচ্ছে সরকারকে। এই সিন্ডিকেটবাজদের শিকড় এতই শক্তিশালী যে, দেশের কোন ইন্টেলিজেন্টরা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেউ কোন খোঁজ খবর রাখার সাহস দেখায় না। তারা সিন্ডিকেট ব্যবস্থাকে ও তাদের অপরাধগুলোকে যেন দেশের আইনে পরিণত করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন>> বদলির পরেও বিএডিসির চেয়ার আঁকড়ে আব্দুস সামাদ!
চিঠিতে এস.এম.রফিক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত এক যুগ ধরে সরকার বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ নীতিতে দুইবার মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানো হয়েছে। শ্রম বাজার সিন্ডিকেট তৈরি করে সরকারের নাম ভাংগিয়ে দেশের নিরীহ শ্রমিকদের উপর উচ্চমাপের চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের শোষণ করা হয়েছে। দেশের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পরিমান অর্থ মানি লন্ডারিং করে দেশের বাহিরে নিয়ে দেশের চলমান বৈদেশিক মুদ্রা বাজার শূন্য করে দিচ্ছে। দেশের নগদ অর্থ বিদেশে পাচার করে দেশীয় মুদ্রা বাজারকে দেউলিয়া করে গুটি কয়েক ব্যক্তি শ্রম বাজার গুলোকে নিজেদের মুঠায় নিয়েছেন। আমিই প্রথম সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে বিগত দিনে রিট পিটিশন নং- ১৫৩৫৯/২০১৬ দায়ের করি। সিন্ডিকেটকারীরা সরকারের সিদ্ধান্তের সম্মান রক্ষার অযুহাতে প্রথমে আমার উপরে চাপ সৃষ্টি করে, পরে আমাকে অপহরনের মাধ্যমে সেই রিট পিটিশন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করেন।
আরও পড়ুন>>শাহজালালে ফের কাস্টমস কর্মকর্তার সোনা চুরি, রক্ষক যখন ভক্ষক!
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, এর বেশির ভাগ টাকায় বিদেশে মানি লন্ডারিং হয়ে দেশের পুঁজি বাজারের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে এই অভিযোগটি তিনি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়াও দুদক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীকে অনুলিপি দিয়েছেন।
বাংলাবার্তা/এসজে