
ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এবং ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জমা পড়া অভিযোগটি যাচাই করে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যেই দুদকের কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছেন।
কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকার খাসি কিনতে গিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন মতিউর রহমান ও তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত।
আরও পড়ুন>> মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠানোর নামে ৩৪৪ মিলিয়ন ডলার পাচার
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়, নামে-বেনামে, দেশে-বিদেশে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ার অভিযোগে ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয় এবং তিনবারই অভিযোগ পরিসমাপ্তি করে তাকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সাড়ে ৬ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি
মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার থাকাকালে সাইমুম অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি তিনি আত্মসাৎ করেন। তথ্য গোপন করে তিনি ‘জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস’ (অফিস-৩৪, গ্রীন রোড, নবাব ম্যানশনের পঞ্চম তলা)-এর সদস্য হয়ে ক্ষুদ্র ও অসচ্ছল ব্যবসায়ী কোটায় বাড্ডায় সরকারি ওয়াকফ এস্টেট সম্পত্তি থেকে একটি প্লট নিজ নামে দলিল করে নেন। সাইমুম অ্যাসোসিয়েটসের সম্পত্তি দখলের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। ভুক্তভোগী এনামুল হকের পরিবার ২০০৭ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলনে এনামুলের বাবা আব্দুস সালাম, মা রহিমা বেগম, বোন আসমা, ভাই রাশেদুল ও ইলিয়াস উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, ১০৯ গ্রীন রোডে অর্কিড প্লাজায় এনামুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেন মতিউর রহমান, তার ভাই নূরুল হুদা ও ক্যাশিয়ার হাফিজুর রহমান। মতিউরের ছোটভাইয়ের শ্যালক রফিকুল আলম জুয়েলের নেতৃত্বে এনামুলের গোডাউন লুট ও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে র্যাব গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছিল।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে টেকনাফে সাগর চুরি
দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। মতিউর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে অবাধে দুর্নীতি করে আসছেন। সব মিলিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
আরও পড়ুন>>গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি
মতিউর রহমানের নামে আরও অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৭/এ সড়কের ৩৮৪ নং বাড়িতে স্ত্রীর নামে ৫০১ নং ফ্ল্যাট, একই ব্লকের ১ নং সড়কের ৫১৯ নং হোল্ডিংয়ে ৭ তলা বাড়ি, যার আনুমানিক দাম ৪০ কোটি টাকা।
প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে ময়মনসিংহের ভালুকায় রয়েছে জুতার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন।
মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রথম অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয় ২০০০ সালের দিকে। তিনি ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে বেনাপোল বন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার ছিলেন। সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুদক তখন দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান ঝুলিয়ে রেখে ২০০৪ সালে অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘটায়।
আরও পড়ুন>> ৩৫শ টাকা বেতনের চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক
দুদকের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এবার অভিযোগটি কমিশনের ব্যাংক শাখা থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে মতিউর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এবং ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে ফোন করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে এই বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন>> বদলির পরেও বিএডিসির চেয়ার আঁকড়ে আব্দুস সামাদ!
একই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিবকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নি। এবং চেয়ারম্যানকেও ফোন দেওয়া হলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষে এমবিএ করেন মতিউর। ১৯৯০ সালে চাকরি নেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে। পরে ১৯৯৩ সালে ১১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘কাস্টমস ক্যাডার’ হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সালে কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পান। মতিউর রহমান ব্রাসেলসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার, ভ্যাট কমিশনারসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাবার্তা/এআর