ছবি : সংগৃহীত
দেশে সম্প্রতি ছাগলকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ও কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মো. মতিউর রহমান সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে দেখিয়েছেন ভেলকিবাজি।
নিজেকে ক্লিন রাখতে ভিন্ন কৌশলে সম্পদ করেছেন ২ স্ত্রী-সন্তান, ভাই ও স্বজনদের নামে। ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন কোটি কোটি টাকা।
৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হলেন ছেলে অর্ণব। যা বর্তমানে টাকার পরিমাণ ছাড়িয়েছে শতকোটি । তবে তার সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ২৭ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে আয় দেখিয়েছেন ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এদিকে মতিউরের ২য় স্ত্রী শাম্মী আখতারও সম্পদে পাহাড় গড়েছে। হঠাৎ করে তিনি গৃহিণী থেকে এখন বড় ব্যবসায়ী। আয়কর ফাইলে গত ২০১৩-১৪ সালে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।
এনবিআরের সদস্য পদ থেকে সরিয়ে সংযুক্তির পর আইআরডিতে যোগ দেননি মতিউর। এমনকি তিনি কোনো ছুটির আবেদনও করেননি। এক্ষেত্রে নিজের অবৈধ সম্পদ বৈধ করার জন্য অন্যের নামে স্থানান্তর-রূপান্তর মাধ্যমে ভোগদখলে রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা যাবে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, নামে-বেনামে, দেশে-বিদেশে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ার অভিযোগে ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয় এবং তিনবারই অভিযোগ পরিসমাপ্তি করে তাকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়।
মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার থাকাকালে সাইমুম অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি তিনি আত্মসাৎ করেন। তথ্য গোপন করে তিনি ‘জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস’ (অফিস-৩৪, গ্রীন রোড, নবাব ম্যানশনের পঞ্চম তলা)-এর সদস্য হয়ে ক্ষুদ্র ও অসচ্ছল ব্যবসায়ী কোটায় বাড্ডায় সরকারি ওয়াকফ এস্টেট সম্পত্তি থেকে একটি প্লট নিজ নামে দলিল করে নেন। সাইমুম অ্যাসোসিয়েটসের সম্পত্তি দখলের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। ভুক্তভোগী এনামুল হকের পরিবার ২০০৭ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলনে এনামুলের বাবা আব্দুস সালাম, মা রহিমা বেগম, বোন আসমা, ভাই রাশেদুল ও ইলিয়াস উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, ১০৯ গ্রীন রোডে অর্কিড প্লাজায় এনামুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেন মতিউর রহমান, তার ভাই নূরুল হুদা ও ক্যাশিয়ার হাফিজুর রহমান। মতিউরের ছোটভাইয়ের শ্যালক রফিকুল আলম জুয়েলের নেতৃত্বে এনামুলের গোডাউন লুট ও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে র্যাব গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছিল।
দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। মতিউর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে অবাধে দুর্নীতি করে আসছেন। সব মিলিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
মতিউর রহমানের নামে আরও অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৭/এ সড়কের ৩৮৪ নং বাড়িতে স্ত্রীর নামে ৫০১ নং ফ্ল্যাট, একই ব্লকের ১ নং সড়কের ৫১৯ নং হোল্ডিংয়ে ৭ তলা বাড়ি, যার আনুমানিক দাম ৪০ কোটি টাকা।
প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে ময়মনসিংহের ভালুকায় রয়েছে জুতার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করেন।
অন্যদিকে আয়কর নথিতে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ৮টি কোম্পানির পরিচালক তার ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব। দেশের বাইরে থেকে লেখাপড়া করে দেশে ফেরা ছেলের বৈধ কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও তিনি এসব কোম্পানিতে কাগজে-কলমে বিনিয়োগ করেছেন ১১ কোটি ৫৮ লাখ ৩ হাজার ৪০০ টাকা। আর ৮টির মধ্যে সাতটিই লিমিটেড কোম্পানি। এর মধ্যে শাহজালাল ইক্যুয়িটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডে ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার, অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেডে ৯ লাখ, ভীরগো কমিউনিকেশন লিমিটেডে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭০০, আইপি কমিউনিকেশন লিমিটেডে ২ লাখ ৬৬ হাজার, এনআরবি টেলিকম লিমিটেডে ৫০ হাজার, গ্লোবাল সুজ লিমিটেডে ১৬ লাখ ২৫ হাজার, লাকিলি বিল্ডার্স লিমিটেডে ৩০ লাখ এবং ওয়ান্ডার পার্ক নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে তার ২ কোটি ১২ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তিনি ঋণ দিয়েছেন ৯ কোটি টাকা। আয়কর ফাইল অনুযায়ী তার মোট ২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এআর