ছবি : সংগৃহীত
দেশে সম্প্রতি ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক এগ্রোর নামে ৪টি খাবারের দোকানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক কোটি ৩১ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এই ৪টি দোকানের প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির তথ্য গোপন করা হয়েছে। এনবিআরের ঢাকা উত্তর ও পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে অভিযান পরিচালনা করে জব্দ করেন প্রতিষ্ঠানগুলোর নথি। নথিতে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পায়েছেন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সাড়ে ৬ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি
কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার গুলশান, তেজগাঁও, মহাখালী ও মোহাম্মদপুরে তার ৪টি দোকান আছে। এই দোকান ৪টি সাদিক এগ্রোর ব্যবসা নিবন্ধন দিয়েই এসব প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে। গত ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালে ৪ দোকানে বিক্রি হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য। এতে ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। কিন্তু তা পরিশোধ করা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে সাদিক এগ্রোর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে টেকনাফে সাগর চুরি
এদিকে সাদিক এগ্রোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু নিলাম ছাড়ই সাদিক এগ্রোর মাধ্যমে জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি, গোপনে ব্রাহমা গরু বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুদক। গত ২,৩ ৪ জুলাই সাদিক এগ্রোর মোহাম্মদপুর, সাভার, নরসিংদী ও খামারবাড়ি প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরে অভিযান চালিয়েছে দুদকের টিম।
আরও পড়ুন>>গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি
এর আগে অনুমতি ছাড়া ২০২১ সালে ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়। পরে সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গরুগুলো কৌশলে নিজের কাছে নিয়ে নেন।
আরও পড়ুন>> ৩৫শ টাকা বেতনের চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক
গত ২০২২-২৩ করবর্ষের আয়কর রিটার্নের তথ্যানুযায়ী, সাদিক এগ্রোর মো. ইমরান হোসেন কর অঞ্চল-৬, সার্কেল-১৩১-এর করদাতা। আয়কর নথিতে ইমরান সাদিক এগ্রো ছাড়াও ইমরান হোসেন ফিশ ফার্মের স্বত্বাধিকারী হিসেবে আয়কর নথিতে আয় দেখিয়েছে। এছাড়া তিনি জালালাবাদ স্টিল লিমিটেড, জালালাবাদ স্টিল বিল্ডিং লিমিটেড, জালালাবাদ মেটাল লিমিটেড ও লাকি স্টিল করপোরেশনের পরিচালক হিসেবে আয় দেখিয়েছেন।
আরও পড়ুন>> বদলির পরেও বিএডিসির চেয়ার আঁকড়ে আব্দুস সামাদ!
রিটার্নে দেখা গেছে, ইমরান হোসেন ওই করবর্ষে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত) সাদিক এগ্রোর মোট বিক্রি দেখিয়েছেন দুই কোটি আট লাখ ১৫ হাজার ২৩৬ টাকা। এ সময় তিনি বাছুর কেনায় খরচ করেছেন ছয় লাখ ১২ হাজার ৪৭০ টাকা। পশুখাদ্য কিনেছেন ৫১ লাখ সাত হাজার ৮১০ টাকার। ওষুধ কেনার খরচ আট লাখ ৬৫ হাজার ৩৬৬ টাকা। কর্মীদের মজুরি দিয়েছেন ১২ লাখ ৭২ হাজার ৪২৫ টাকা। সাদিক এগ্রোর রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং অন্যান্য খাতে সর্বমোট ব্যয় করেছেন ৮৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৩৪ টাকা। এর সঙ্গে অন্য সব খরচ বাদ দিয়ে আয় দেখিয়েছেন ৮১ লাখ ২১ হাজার ২৬৯ টাকা। আর দুই কোটি আট লাখ ১৫ হাজার ২৩৬ টাকায় তিনি দেড় হাজার গরু বিক্রি করেছেন।
আরও পড়ুন>> মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠানোর নামে ৩৪৪ মিলিয়ন ডলার পাচার
অন্যদিকে সাদিক এগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগে সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। সংস্থাটির ১৫ সদস্যের টিম সেখানে অভিযান চালায়। গত বছর কোন প্রক্রিয়ায় সরকারের এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬টি ব্রাহমা জাতের গরু সাদিক এগ্রোকে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নিতে দুদক টিম এই অভিযান পরিচালনা করে। নিজেদের জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানি করা গরু তিন বছর পর আবারও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে কারসাজির মাধ্যমে সেসব গরু ফিরিয়ে নেয় সাদিক। গো প্রজনন খামারের টেন্ডার জালিয়াতিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদক এই অভিযান।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় খাল ও সড়ক দখল করে অবৈধ ভাবে নির্মাণ করা সাদিক এগ্রোর অংশ বিশেষ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।
বাংলাবার্তা/এআর