ছবি : সংগৃহীত
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের ৪ বছর ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ব্যক্তিগত টাকা মনে করে খরচ করতেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রেজাউল হক যাকে ইচ্ছা তাকে পদোন্নতি দিতেন। এ কাজে তিনি সরাসরি ঘুষের সাথে জড়িত ছিলেন। আর তার নারীর কেলেঙ্কারির বিষয়টি সবায় জানা থাকলেও কেউ তার ভয়ে কখা বলার সাহস পেতেন না।
আরও পড়ুন>> বারবার দুদককে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন মতিউর রহমান
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চেয়ারম্যান তার নারী সহকর্মীদের নানা কৌশলে কুপ্রস্তাব মানতে বাধ্য করেছেন। অনেক মেধাবী নারী ব্যাংকার তার কুপ্রস্তাবের কারণে ব্যাংকটি ছেড়ে চলে গেছেন। তার এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেন ব্যাংকটির সাবেক দুই কর্মকর্তা নাজমুস সাদাত ও হুমায়ুন কবির। এই দুই সহযোগী সাবেক চেয়ারম্যানের চাহিদামতো নারী কর্মকর্তাদের কুপ্রস্তাব দেওয়া ও তা মানতে বাধ্য করতেন। এ ছাড়া নানা সময়ে বাইরে থেকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে নারী সরবরাহের কাজও তারা করতেন। নারী সাপ্লাই দিয়েই বছর বছর পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট নিতেন। এছাড়াও তিনি বিনিয়োগ থেকে কমিশন নিতেন ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ।
আরও পড়ুন>> মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠানোর নামে ৩৪৪ মিলিয়ন ডলার পাচার
এই প্রতিষ্ঠানের নাজমুস সাদাত ইভিপি হিসেবে প্রধান শাখায় দায়িত্ব পালনকালে বেশ কিছু ঋণ ও বিনিয়োগে অনিয়ম করেন বলে অভিযোগ আছে। আর এই কারণে তাকে মানবসম্পদ বিভাগে সংযুক্ত রাখা হয়। এ ছাড়া তিনি ঢাকার কাকরাইলে ব্যাংকের একজন ঋণগ্রহীতার সাথেও গোপনে ব্যবসা করতেন, যা চাকরির আইনের পরিপন্থী। পরে শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা কারণে তাকে চূড়ান্তভাবে চাকরি হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন>> কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে টেকনাফে সাগর চুরি
এছাড়া এই চেয়ারম্যানের পরিচিত একজন হুমায়ুন কবির আওয়ামী লীগ দলের মিরপুর থানা শাখার দলীয় প্রভাবের তার সহকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে চলতেন। সাবেক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে কেউ এই দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বাড়াবাড়ি করতেন না।
এদিকে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জোর করে মালিকানা নিয়ে ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেওয়া হয়েছে। এখন সময় এসেছে পর্ষদ পুনরুদ্ধার করে ব্যাংকটিকে আগের মতো ভালো অবস্থায় নেওয়ার। এতে বাধা দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। আমরা চাই, ব্যাংকটি প্রকৃত উদ্যোক্তা হাতে ফিরিয়ে এনে আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তবে এ জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন>> মিথ্যা ঘোষণায় কুরিয়ার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে নভোএয়ারের ৩০ পণ্যের চালান
এসআইবিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের প্রথম ৯ মাসে এসআইবিএলে মোট পরিচালন ব্যয় ছিল ৩৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ‘অন্যান্য’ ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা, যে ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই ব্যাংকের নথিতে। শুধু ‘অন্যান্য’ লিখেই এই টাকা হাতিয়েছেন চেয়ারম্যান নিজে।
আরও পড়ুন>>গুলশান-বনানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি
জানা গেছে, দুই সন্তান দেশের বাইরে থাকায় প্রতি মাসেই লন্ডন অথবা যুক্তরাষ্ট্রে যেতেন রেজাউল হক।
এদিকে এসআইবিএলের আগের পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। পর্ষদে যারা আছেন, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মেজর (অব.) মো. রেজাউল হক, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোরশেদ আলম খন্দকার এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. আনোয়ার হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাবার্তার পক্ষ থেকে রেজাউল হকের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার কোন বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাবার্তা/এসজে