ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: আওয়ামী সরকার পতনের পর একের পর এক ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য,কাউন্সিলর এবং নেতাকর্মীদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে একাধিক মন্ত্রী,সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী নেতাকর্মীদের অবৈধ সম্পদ পাওয়ায় মামলা করেছে কমিশন। এবার আওয়ামী সরকারের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৮ নম্বর ওয়ার্ড এর সাবেক কাউন্সিলর মো. আবুল কাশেম মোল্লার (আকাশ) অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে কমিশন।
দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, আবুল কাশেম মোল্লা ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ১০ থেকে ১৫ বছরে ১০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। যার কোনো বৈধ উৎস নেই। তিনি ১৫ বছর আগেও ফুটপাতে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কাউন্সিলর হওয়ার পর তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাবেক কাউন্সিলর কাশেমের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার তহবিল লুটপাট এবং শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত এপ্রিলে অনুসন্ধানে নামে কমিশন। অভিযোগে,মিরপুরের শাহ আলীতে অবস্থিত মসজিদুল আকবর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন তিনি বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে ওই পদে থেকে প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে প্রায় ৩২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা এবং মিরপুর-১-এ নিজ ও স্ত্রীর নামে একাধিক বাড়ি, শাহ আলী মার্কেটে একাধিক দোকান এবং পৈত্রিক বাড়ি মুন্সীগঞ্জে বিলাসবহুল বাড়িসহ শত কোটি টাকার অঢেল সম্পদের তথ্য জানানো হয়।
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, এসব অভিযোগ কমিশনে দাখিল হওয়ার পর কমিশন থেকে সত্যতা খুঁজতে মাঠে নামে একটি অনুসন্ধান দল। এরপর সেই অনুসন্ধান টিম অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র এবং আবুল কাশেমের ব্যক্তিগত নথিপত্র তলব করে। এমনকি সরকারি বিভিন্ন দফতরে চিঠিও দেওয়া হয়। কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান এই চিঠি বিভিন্ন দফতের পাঠান।
এদিকে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, ইতোমধ্যে সাবেক কাউন্সিলর কাশেমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদসহ নানা তথ্য কমিশনে এসেছে। সেগুলো এখন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
এদিকে সাবেক কাউন্সিলর কাশেমের একটি ঘনিষ্ট সূত্র বলছে, জাপানে থাকা তার শ্যালক মো রাসেলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে। বর্তমানে তার শ্যালক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ক্ষমতার পালাবদলের পর তার শ্যালক গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশে আসেন এবং আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাসহ বাংলাদেশ বিমানের বিজি০৩৭৬ বিমানযোগে জাপানের নারিতা পালিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাবার্তাকে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, যেকোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ কিংবা যেকোন অভিযোগ আসার পর সেটা যাচাই বাছাই শেষে অনুসন্ধানের যোগ্য হলে সেটা অনুসন্ধান করা হয়। যেহেতু অনুসন্ধান চলছে সুতরাং অনুসন্ধান শেষে যে তথ্য পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগে আরও বলা হয়, মসজিদুল আকবর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবুল কাশেম মাদ্রাসার সরকারি অ্যাকাউন্ট থেকে ৩২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনসহ সকল সরকারি টাকা এবং মাদ্রাসার আয়ের টাকা বাংলাদেশ মাদ্রাসা গেজেটের ৪৫ (৪) ধারায় নগদ আয়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না দিয়ে সরাসরি সরকারি আইন লঙ্ঘন করেছেন। প্রতিষ্ঠানের আয় করা অর্থ ১৯৮৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসার অগ্রণী ব্যাংক হিসাবে জমা হতো। কিন্তু মসজিদুল আকবর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবুল কাশেম মোল্লা (আকাশ) কারসাজি করে ২০১৬ সাল থেকে মাদ্রাসা আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো কিছু টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করে বাকি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাহ আলী থানার সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগে সম্পদের বিবরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আবুল কাশেম মোল্লার অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে, মিরপুরের রাসেল পার্ক সংলগ্ন প্লটে ২০ কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ তলা ভবন (মিরপুর-১, ব্লক-ডি, রোড-২, বাসা নং-১৫), প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের মিরপুর শাহ আলী মার্কেটের নিচ তলায় একটি এক হাজার বর্গফুটের দোকান, কোটি টাকা মূল্যের মিরপুর-১, ব্লক-ডি, প্লট-১১৩ এর পঞ্চম তলায় ১৬০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, মিরপুর-১-এ স্ত্রীর নামে ১৫ কোটি টাকা মূল্যের বাড়িসহ পাঁচ কাঠার জমি, প্রায় দুই কোটি টাকার মূল্যের মুন্সীগঞ্জ জেলায় নিজ গ্রামের বাড়িতে অত্যাধুনিক একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি।এছাড়া তিনি সরকারি আট থেকে ১০টি প্লট জোর করে দখলে রেখেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বাংলাবার্তাকে বলেন, দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে দুর্নীতি বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে দুদক। এর ফলে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের দুর্নীতির তথ্য সামনে আসছে। কিন্তু আগে থেকে যদি এগুলো আসতো তাহলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেতো। কিভাবে দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য তিনি চেষ্টা করবেন। একই সাথে দুদককে স্বাধীন এবং সব ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে কাজ করবেন তিনি বলেও জানান।
বাংলাবার্তা/এসজে