ছবি: বাংলাবার্তা
ঢাকা: মোংলা কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন। এমন কোন দুর্নীতি নেই যা তিনি করেননি। সোনা চোরাচালান, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে পণ্য খালাস, ভারতে জাল মুদ্রার ব্যবসা, জাল সনদ দিয়ে সিএন্ডএফ লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন কাস্টমসের যোগসূত্রে।
সম্প্রতি এতসব দুর্নীতির নিয়ে মোংলা কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের সদস্য মহিউদ্দিন আহমদ সংগঠনের সভাপতিতে একটি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। সেখানে উঠে এসেছে কিভাবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন কাস্টমসের সঙ্গে যোগসূত্র করে দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
জানা যায়, মোংলা কাষ্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশন একটি ব্যবসায়িক সংগঠন। সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ লিয়াকত হোসেনের (লিটন) বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কমান্ডিং অফিসার, যৌথ বাহিনী, খুলনা বরাবর মোঃ কালাম নামে এক ব্যক্তি দাখিল করেছেন। যাহার মধ্যে উল্লেখ্য, মটোর পার্টস আমদানীর ঘোষণা দিয়ে বাস/ট্রাকের ইঞ্জিনের মধ্যে স্বর্ণ আনতেন এবং এই স্বর্ণ চোরা চালানের প্রধান হোতা লিয়াকত হোসেন লিটন এবং তার ছোট ভাই শেখ জুয়েল। ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরি করে ভারতে পাচার করে ভারতের মুদ্রাস্ফিতি ঘটনার জন্য তারা এই অবৈধ ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
আরও জানা যায়, শেখ লিয়াকত হোসেন ও তার ছোট ভাই জুয়েল এস.এস.সি সনদ পত্র ব্যতিত অন্যান্য সকল জাল সনদপত্র কাস্টমসে জমা দিয়ে সি.এন্ড.এফ লাইসেন্সের মালিক হয়েছেন। সাধারণত সি.এন্ড.এফ লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য গ্র্যাজুয়েশান বাধ্যতামূলক অথচ তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল সনদপত্র দাখিল করে এ যাবতকাল অবৈধ ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। মোংলা কাস্টম এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত থাকার কারণেইসি কমিটির সদস্যদের কোনরুপ তোয়াক্কা না করে, ইচ্ছা মতো তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এদিকে আরও জানা গিয়েছে, বি.সি.আই.সি ঢাকা এর জাতীয় টেন্ডার নং-১/৩৪১৪/২০২২-২০২৫ এ তারিখ-০২/০৩/২০২২ খ্রিঃ মোংলা বন্দরে সার খালাশ এর পক্ষে ৩৫ জন সিএন্ডএফ এজেন্ট নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। উক্ত ৩৫ জন সিএন্ডএফ এর কাছ থেকে ৬৮ লাখ টাকা বি.সি.আই.সি কর্তৃপক্ষকে ঘুষ দেবার জন্য সংগ্রহ করেন লিয়াকত। উক্ত অর্থ অত্র এসোসিয়েশনের নিজস্ব হিসাবে জমা না দিয়ে, অত্র এসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদকের নিজস্ব কোম্পানি ব্যবহার করেন এবং অর্থ সম্পাদকের কোম্পানির ব্যাংক হিসাব নাম-নীহ্যাল শিপিং লাইন্স, হিসাব নং-০০৮৩৩০০৭৪২০, ষ্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি খুলনা শাখা, খুলনা। বিসিআইসি কর্তৃপক্ষের বাণিজ্য শাখায় ঘুষ দেয়ার নাম করে এর মধ্যে থেকে ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।
আরও জানা যায়, বেশ কয়েকমাস আগে কাপড়ের একটি বড় চালানেরকন্টেইনারের তালা ভেঙ্গে রাতের আধারে শুল্ক করাদি ফাঁকি দিয়ে মোংলা বন্দরের অভ্যান্তর থেকে তার নিজের কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে পণ্য বের করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে উক্ত পণ্যের ঢাকার আমদানী কারক মামলা দায়ের করলে গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে শেখ লিয়াকত হোসেন লিটনের নাম বেরিয়ে আসে। আওয়ামী ক্ষমতার প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে মামলার তদন্ত ফাইনাল রিপোর্ট স্থগিত হয়ে আছে। মোংলা বন্দর বাগেরহাট জেলার আওতাভূক্ত হওয়ায় এই লিয়াকত হোসেন লিটন কাষ্টমস কর্মকর্তা, কর্মচারী, সিএন্ডএফ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অবৈধ অস্ত্রের ভয় ভীতি প্রদর্শন ও জীবন নাশের হুমকি দেখিয়ে সকলকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখতেন। এমনকি কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তাদের সাথে তার গোপন সখ্যতাও রয়েছে। যারা তার অনিয়ম আর দুর্নীতির সঙ্গী। আর এই মোংলা বন্দর ব্যবহার করে লিয়াকত অবৈধ ভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গিয়েছেন।
এদিকে মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ-৪ এর উপধারা ৫ ও ৮ এর সুস্পষ্ট লংঘন অভিযুক্ত শেখ লিয়াকত হোসেন (লিটন) এসোসিয়েশনের বিধি বিধান মতে শাস্তি যোগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়াও শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কয়েকটি ফৌজদারী মামলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এসব ঘটনায় দুর্নীতি, অপকর্ম এবং নৈতিক ও চারিত্রিক স্খলনের জন্য শেখ লিয়াকত হোসেনের (লিটন) মোংলা কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের সকল পদ পদবীসহ সাধারণ সদস্য পদ থাকার কথা না।
এসব বিষয়ে উল্লেখ করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতিকে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানানো হয়েছে। ব্যর্থতায় সভাপতির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনেরও কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এবং অভিযুক্ত লিয়াকত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি সভাপতির ফোন নাম্বারেও বারবার ফোন দেওয়া হলে তার ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
দ্বিতীয় পর্বে থাকছে, লিয়াকত সিন্ডিকেটসহ মোংলা কাস্টমসের সিএন্ডএফ সদস্যদের নানা দুর্নীতির ফিরিস্তি .....চলমান
বাংলাবার্তা/এআর/এসজে