ছবি: বাংলাবার্তা
থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মোল্লা এবং তানাকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন ওরফে মাহিন থেকে প্রতিমাসে ঘুষ নিতেন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ এর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসসহ কয়েকজন। এছাড়া এস আলম গ্রুপ থেকেও বিভিন্ন অংকের ঘুষ নিতেন মাসুদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি চক্র। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত পনের বছর ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকা বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিসহ মাফিয়া ব্যবসায়ীদের অর্থপাচারসহ নানা দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউতে। অনেক প্রভাবশালীর আর্থিক অপরাধের বিষয়ে জেনেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি। দুদক বলছে, বিএফআইইউ এর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসসহ তার কয়েকজন সহযোগী প্রভাবশালীর আর্থিক অপরাধের তথ্য গোপন করে নিজেরাই জড়িয়েছেন দুর্নীতিতে।
২০০২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে গঠন হয় এন্টি মানি লন্ডারিং ডিপার্টমেন্ট। ২০১৫ সালে সংশোধিত মানি লন্ডারিং আইনে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। যা বিএফআইইউ নামে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১২ই আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন বিএফআইইউ'র প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। এরপর তার দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামে দুদক।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বিএফআইইউতে মাসুদ বিশ্বাসের সহযোগী ছিলেন তার কয়েকজন বিশ্বস্ত সহকর্মী। যারা বিভিন্ন আর্থিক অপরাধের তথ্য ধামাচাপা দিতেন। অনুসন্ধানে মাসুদ বিশ্বাসসহ তার সহযোগীদের দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে দুদক।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ওঠে আসে, বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকা অনেক প্রভাবশালীর অর্থপাচার, সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য গোপন করেন মাসুদ। যেমন ইউসিবি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে থার্মেক্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত ঋণের অর্থ ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে। বিএফআইইউ'র তদন্তে ধরা পড়লেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি মাসুদ বিশ্বাস। আব্দুল কাদের মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ ছাড়াও এস আলম, তানাকা গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসুদ বিশ্বাস চক্র নিয়মিত আর্থিক সুবিধা নিতো। প্রতিবেদনে বলা হয়, আব্দুল কাদের মোল্লার অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের হাতে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। আমদানি রপ্তানির আড়ালে তিনি অন্তত পাঁচশো কোটি টাকা দেশ থেকে সরিয়েছেন। যা নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়াতো দূরের কথা উল্টো তার দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ এবং তানাকা গ্রুপ থেকে প্রতিমাসে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার তথ্য দুদকের কাছে আছে। ব্যবসায়ী কাদের মোল্লার বিষয়েও নানা দুর্নীতির তথ্য তারা পেয়েছেন। এসব অনুসন্ধান করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুদক জানিয়েছে, বিএফআইইউ'র কয়েকজন কর্মকর্তার দেশে বিদেশে সম্পদের তথ্য এখন তাদের হাতে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ১১টি দেশে মাসুদ বিশ্বাসের সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।
তানাকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন ওরফে মাহিনের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একসময়ে পাটুয়াটুলীর অডিও ক্যাসেটের দোকানি মাহিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামে অগ্রণীসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ৬১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে তার মালিকানাধীন তানাকা গ্রুপের নামে প্রায় ১২০ কোটি টাকা, মুহিব স্টিল কোম্পানির নামে প্রায় ৯১ কোটি টাকা, মারহাবা টেক্সটাইল মিলসের নামে ৪৫ কোটি টাকা, এআরটি শিপব্রেকিং লিমিটেডের নামে ৫০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে বলে দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
অন্যদিকে থার্মেক্স গ্রুপের কাদের মোল্লার বিরুদ্ধেও দুদকের কাছে ঋণের নামে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এআর