
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু প্রতিভা ও পারফরম্যান্সের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পাওয়াটা যেন কঠিন এক সমীকরণ। এই দোটানার মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন লিটন দাস। ব্যাট হাতে অসাধারণ প্রতিভা দেখিয়েও বারবার ব্যর্থতায় ভেঙে পড়েছেন। আবার সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তাই হয়তো তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ‘আনলাকি’ ক্রিকেটার।
লিটনের দুর্ভাগ্যের আখ্যানের শুরুটা ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে উত্থান দিয়েই। তিনি যখনই ঘরোয়া ক্রিকেটে সাফল্য পান, মনে হয় জাতীয় দলে এবার নিশ্চয়ই নিজেকে মেলে ধরবেন। কিন্তু বাস্তবতা অনেক সময়ই ভিন্ন গল্প বলে। ব্যাটে রান না আসায় বারবার বাদ পড়তে হয়েছে। প্রতিবারই নির্বাচক, কোচ বা অধিনায়ক বলেন—‘লিটনের বাদ পড়াটা দুর্ভাগ্যজনক।’
তবে এ কথার অর্থ কি লিটনের সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি? একদম না। বরং তার প্রতিভা এতটাই স্পষ্ট যে, প্রত্যাবর্তনের সুযোগ বারবার এসেছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছিল ধারাবাহিকতা। দর্শনীয় ব্যাটিং শৈলীর অধিকারী হলেও তা ম্যাচজয়ের রূপ নিতে পারেনি সবসময়।
লিটন নিজেও বিষয়টি জানেন। একবার বলেছিলেন, “ভালো খেললে বাহবা পাব, খারাপ খেললে সমালোচনাও হবে। এটাই স্বাভাবিক। এখন আর এগুলো আমাকে ভাবায় না।” কিন্তু এই নির্লিপ্ততা কখনও আত্মরক্ষার দেয়াল, আবার কখনও আত্মসমালোচনার ভাষ্য।
সম্প্রতি ডিপিএলে ফর্মে ছিলেন, চোখধাঁধানো ইনিংস উপহার দিয়েছেন। সে ফর্ম নিয়েই পিএসএলে খেলার কথা ছিল, কিন্তু সেখানে গিয়ে অনুশীলনেই চোট পেয়ে ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরতে হয়। নিজের ভাষায়, ‘মিশন শুরু হওয়ার আগেই শেষ।’ এটি কি শুধুই দুর্ভাগ্য?
একদিকে হতাশা, অন্যদিকে আবার আইপিএল, পিএসএলের মত ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর আগ্রহ—যেটা দেশের অন্য কোনো উইকেটকিপার ব্যাটার পান না। এতে বোঝা যায়, লিটনের পারফরম্যান্স নয়, তার পটেনশিয়াল বা সম্ভাবনাই তাকে আশায় রাখে।
তাই হয়তো লিটন দাসের গল্পকে বলা যায় আশা ও হতাশার মধ্যকার এক নাটকীয় যাত্রা। একদিকে আক্ষেপ, অন্যদিকে প্রত্যাবর্তনের প্রতিজ্ঞা। ক্রিকেটবিশ্বে এমন চরিত্র খুব কমই দেখা যায়, যারা একই সঙ্গে এতবার ব্যর্থ হয়ে আবার ফিরেও আসেন। লিটন সেই বিরল প্রজাতির প্রতিনিধি। তার নাম থাকবে কারণ তিনি নিজেকে একাই বারবার হারিয়ে আবার তৈরি করেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ