
ছবি: সংগৃহীত
নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে বাংলাদেশের জয়রথ যেন এক অনন্য আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। প্রতিযোগিতাটি চলছে পাকিস্তানের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে, যেখানে বিশ্বের ছয়টি দল—বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড—এবারের বাছাই পর্বে অংশ নিচ্ছে। চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার সুযোগ মিলবে মাত্র দুটি দলের। আর সেই জায়গা দখলের দৌড়ে বাংলাদেশ নারী দল এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
টানা তিনটি জয়ের পর নিগার সুলতানার নেতৃত্বাধীন দল এখন একেবারে বিশ্বকাপের দরজায় কড়া নাড়ছে। প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ১৭৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল টাইগ্রেসরা। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে আয়ারল্যান্ডকে ২ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আবারও প্রমাণ করে তারা। আর সর্বশেষ ম্যাচে মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে প্রায় নিশ্চিত করেই ফেলেছে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট।
লাহোরে বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া ব্যাটিং
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। শুরুটা ছিল ধীরস্থির, কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশি ব্যাটারদের ব্যাটে যেন আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শারমিন আক্তার ও ফারজানা হক পিংকির হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে যোগ হয় নিগারের ব্যাটিং তাণ্ডব। নিগার ৫৯ বলে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল দৃঢ়তা, নিয়ন্ত্রণ আর নিখুঁত স্ট্রোকপ্লে।
বাংলাদেশ গড়েছে তাদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ—২৭৬ রান। এই রান তাড়া করতে নেমে স্কটল্যান্ডের মেয়েরা শুরুতেই চাপে পড়ে যায়। যদিও স্কটিশ ব্যাটার প্রিয়নাজ চ্যাটার্জি ও রাচেল স্লেটার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবুও বাংলাদেশের ঘূর্ণির ফাঁদে শেষমেশ আটকে পড়তে হয় তাদের।
নাহিদা আক্তার ছিলেন দুর্দান্ত। তিনি ১০ ওভারে মাত্র ৪০ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি মূল্যবান উইকেট। তার অসাধারণ স্পেলেই মূলত স্কটল্যান্ড ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। বাংলাদেশ জয় পায় ৩৪ রানের ব্যবধানে।
বিশ্বকাপের খুব কাছে নিগার বাহিনী
বাছাই পর্বে এখনও বাংলাদেশের সামনে দুটি ম্যাচ বাকি রয়েছে—বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শনিবার স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই দুটি ম্যাচের যেকোনো একটিতে জয় পেলেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্য। এমনকি জয় না পেলেও, যদি কোনো এক ম্যাচ পরিত্যক্ত হয় এবং সেখান থেকে এক পয়েন্টও পাওয়া যায়, তাহলেও নিগার সুলতানারা জায়গা করে নেবে ভারতের বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। আত্মবিশ্বাস, ফর্ম এবং পরিকল্পনার নিখুঁত বাস্তবায়নের ফলে অন্যান্য প্রতিপক্ষের তুলনায় বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে। বিশেষ করে দলের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পারফরম্যান্স লক্ষ্য করা যাচ্ছে—উইকেট শিকারী বোলারদের পাশে দুর্দান্ত ব্যাটারদের সমন্বয় দলকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে।
নিগারের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা
অধিনায়ক নিগার সুলতানা নিঃসন্দেহে এই দলের চালিকাশক্তি। শুধু নেতৃত্ব দিয়েই নয়, ব্যাট হাতে বড় দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিচ্ছেন তিনি। থাইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড—তিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই তাঁর পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়। বিশেষ করে সর্বশেষ ম্যাচে ম্যাচসেরা পারফরম্যান্সে তিনি আবারও প্রমাণ করলেন, কেন তিনি এই দলের প্রাণভোমরা।
দলের অন্যান্য খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সও নজর কাড়ছে। ওপেনারদের মধ্যে শারমিন আক্তার ধারাবাহিকভাবে রান করে যাচ্ছেন, ফারজানা হক পিংকি মাঝারি ওভারগুলোয় দলের ইনিংস মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। আর বোলিং বিভাগে সালমা খাতুন, নাহিদা আক্তার ও জাহানারা আলমের অভিজ্ঞতা দলকে এনে দিচ্ছে বাড়তি সুবিধা।
এই বাছাই পর্বে বাংলাদেশ দল শুধু জয়ের জন্য খেলছে না, তারা খেলছে মর্যাদা, আত্মবিশ্বাস আর একটি নতুন ইতিহাস গড়ার প্রত্যয়ে। নিগারদের লক্ষ্য এখন খুব স্পষ্ট—ভারতে অনুষ্ঠিতব্য নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা নিশ্চিত করা। আর সে লক্ষ্যে তারা এখন একদম দ্বারপ্রান্তে।
আগামী দুটি ম্যাচে যেকোনো একটি জয় এই দলের স্বপ্ন পূরণ করে দেবে। এমনকি আবহাওয়া কিংবা অন্য কারণে একটি ম্যাচ যদি পরিত্যক্ত হয়, তাও নিশ্চিত করবে বিশ্বকাপের টিকিট। তাই বলা যায়, আর মাত্র এক পা ফেলতে পারলেই কেল্লাফতে।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের জন্য এখন দরকার শুধু শেষ ধাপে স্থির থেকে এগিয়ে যাওয়া। কারণ তাদের সামনে ইতিহাস রচনা করার সুবর্ণ সুযোগ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ