
ছবি: সংগৃহীত
বিতর্ক যেন ছায়ার মতো অনুসরণ করে সাকিব আল হাসানকে। মাঠে যেমন পারফরম্যান্সের ঝলক দেখিয়েছেন, তেমনি মাঠের বাইরেও সময় সময় জড়িয়ে পড়েছেন নানা বিতর্কে। একেক সময় একেক ইস্যুতে উঠে এসেছে তার নাম—ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বিরোধ, আইসিসির নিষেধাজ্ঞা, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে জড়ানো, কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাত, স্বর্ণের ব্যবসায় সন্দেহজনক লেনদেন এবং সবশেষে একটি হত্যাকাণ্ডের মামলায় তার নাম উঠে আসা। সব মিলিয়ে এই বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার এখন রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে।
তবে এত বিতর্ক, প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা ও আইনি জটিলতার পরও দেশে ফিরতে চান তিনি। ফিরতে চান মাঠে, ফিরতে চান জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে খেলতে। এজন্য ইতোমধ্যেই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। দাবি করেছেন, যেকোনো তদন্তে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। শুধু একটি শর্ত—তাকে যেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
‘আমি পালিয়ে যাচ্ছি না, আমি ফিরে আসতে চাই’
সম্প্রতি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমি কোনো কিছু থেকে পালাচ্ছি না। আমি বরং সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে সবকিছু স্বচ্ছভাবে মিটিয়ে নিতে চাই।”
সেখানে তিনি বলেন, “শেয়ার বাজারের ব্যবসায় আমার কোনো লাভ হয়নি। আমি কোনো প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলাম না। কোনো মিটিংয়ে যাইনি, অফিসেও যাইনি। শুধু একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আমি আমার টাকা দিয়েছি, এবং সেই টাকাই আমি হারিয়েছি। তাহলে দোষটা কিভাবে আমার হলো?”
সাকিব আরও বলেন, “আমি চাই নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্ত হোক, যেন আমারও বোঝা সহজ হয় কোথায় কীভাবে এই ক্ষতি হলো। আমি যদি সত্যিই কোথাও ভুল করে থাকি, সেটাও আমি জানতে চাই। তবে কারো যদি মনে হয় আমি এই ব্যবসায় লাভ করেছি, তাহলে প্রমাণ দেখাক। আমি তা জানতেও আগ্রহী।”
শেয়ার বাজার, কাঁকড়া খামার, স্বর্ণ ব্যবসা—সবই তদন্তের আওতায় আনতে প্রস্তুত
শুধু শেয়ার বাজার নয়, সম্প্রতি যেসব অভিযোগ সাকিবের বিরুদ্ধে এসেছে, সব কিছুর তদন্তে তিনি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। তার ভাষায়, “চাই সেটা শেয়ার মার্কেট হোক, কাঁকড়া খামার হোক, কিংবা স্বর্ণ ব্যবসা—তদন্তকারী সংস্থাগুলো যদি কোনো তথ্য চায়, আমি দিতে প্রস্তুত। আমি কোনো কিছুই গোপন করছি না।”
সাকিব আরও জানান, “বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানকে আমি সরাসরি মেসেজ করেছি। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর আসেনি, তবুও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে সব কিছু ক্লিয়ার হয়। আমি শেয়ার মার্কেট, ব্যাংকিং খাত, এমনকি সরকারের সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, যেন একটা স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো যায়।”
তার ভাষায়, “আমি চাই সমস্যা মিটে যাক। এটা শুধু আমার জন্য নয়, পুরো দেশের জন্যই ভালো হবে।”
জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন এখনও উজ্জ্বল
যদিও গত সাত মাস ধরে জাতীয় দলের সঙ্গে নেই কোনো সম্পর্ক, ক্রিকেট বোর্ডের সাথেও নেই সরাসরি যোগাযোগ, এমনকি দেশের মাটিতেও পা রাখেননি জুলাইয়ের আন্দোলনের পর থেকে—তবুও সাকিবের স্বপ্ন থেমে নেই।
তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, তার ভেতরে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সক্ষমতা আছে। সাকিব বলেন, “আমি অন্তত আরও দুই বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, আমি আবার মাঠে ফিরব। দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে খেলার চেয়ে বড় কিছু আমার কাছে নেই।”
‘আমার নিরাপত্তা দিতে হবে, তাহলেই ফিরব’
তবে জাতীয় দলে ফেরা এবং দেশের মাটিতে ফেরার জন্য সাকিব একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত দিয়েছেন—নিরাপত্তা। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিকভাবে তার বিরুদ্ধে একটি নেপথ্য প্রচারণা চলছে এবং কোনো কোনো পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, “যদি আমি দেশে ফিরে তদন্তে সহযোগিতা করি, তাহলে আমাকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, কিছু পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে বিপদে ফেলতে চাইছে।”
সাকিব আল হাসান শুধু একজন ক্রিকেটার নন, তিনি এখন একাধারে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আলোচিত এক মুখ। তার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ, আইনি জটিলতা এবং বিতর্কের ভিড়ে তিনি যা বলেছেন—তা হলো, “আমি পালাচ্ছি না, বরং ফিরতে চাই। আমি তদন্তে সহযোগিতা করতে চাই, শর্ত একটাই—নিরাপত্তা।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সাকিব একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন—যে তিনি পালিয়ে বেড়ানো মানুষ নন, বরং সত্য ও ন্যায়ের আলোকে দাঁড়ানোর ইচ্ছা রাখেন। এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থাগুলো তার বক্তব্যকে কীভাবে মূল্যায়ন করে এবং ভবিষ্যতে সাকিব আদৌ মাঠে ফিরতে পারেন কিনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ