
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের উদীয়মান লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে গড়ে তুলছেন এক প্রতিশ্রুতিশীল আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হিসেবে। দেশের মাটিতে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর থেকেই আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। আর এবার নিজের প্রতিভা ও দক্ষতা তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বড় এক মঞ্চে—পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল)। অভিষেকের পরপরই নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে ক্রিকেট মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন রিশাদ।
চলমান পিএসএলের দশম আসরে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছেন রিশাদ হোসেন। লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলতে গিয়েই তিনি জানান দিচ্ছেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো মানসিকতা ও সামর্থ্য রাখেন। ইতোমধ্যেই টানা দুই ম্যাচে ৩টি করে উইকেট নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন এই তরুণ লেগ স্পিনার।
পিএসএলে রিশাদের যাত্রা শুরু হয় কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। অভিষেক ম্যাচেই প্রতিপক্ষের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেন তিনি। মাত্র ৩৫ রান খরচায় তুলে নেন ৩টি মূল্যবান উইকেট, যার ফলে লাহোর কালান্দার্স সহজ জয় পায়। তার কার্যকর স্পিন ও বৈচিত্র্যময় ডেলিভারি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করে ফেলে।
এরপর করাচি কিংসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেও থেমে থাকেননি রিশাদ। বরং আগের চেয়েও বেশি মারকাটারি পারফরম্যান্স দেখিয়ে ২৬ রান দিয়ে তুলে নেন আরও তিন উইকেট। এটি ছিল পিএসএলে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং পারফরম্যান্স। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের তুলে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন এই তরুণ।
তার এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে মুগ্ধ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি রিশাদের প্রশংসায় বলেন, “রিশাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ও খুব ফোকাসড আছে। সে জানে, এখনই নিজেকে প্রমাণ করার সময়। শুরুতেই ভালো করেছে, এটা ওর আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। দলে ওর অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে, যা একজন তরুণ খেলোয়াড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ফাহিম আরও বলেন, “ও তো খুব বেশি অভিজ্ঞ না, এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পুরো চেনাজানা হয়নি। বিদেশের কন্ডিশনে এরকম একটা বড় মঞ্চে খেলতে পারা এবং ভালো করা—এটা দারুণ সুযোগ ওর জন্য। আমি নিশ্চিত, এই অভিজ্ঞতা ওকে আরও পরিণত করবে। যখন রিশাদ দেশে ফিরে আসবে, আমরা হয়তো এক ভিন্ন রিশাদকে দেখবো—আরও পরিণত, আত্মবিশ্বাসী এবং আন্তর্জাতিক মানের একজন স্পিনার হিসেবে।”
বাংলাদেশ দলের ঘরানায় বিশেষ করে লেগ স্পিনারদের উপস্থিতি বরাবরই ছিল কম। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে লেগ স্পিনারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে রিশাদের মতো একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী লেগ স্পিনারের উঠে আসা দেশের ক্রিকেটের জন্য সুসংবাদই বলা যায়।
জাতীয় দলে এখন নিয়মিত জায়গা না পেলেও রিশাদের সাম্প্রতিক ফর্ম নির্বাচকদের নজর কেড়েছে। বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেট, বিপিএল এবং এখন পিএসএলে তাঁর পারফরম্যান্স প্রমাণ করে দিচ্ছে—বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে একজন ধারাবাহিক উইকেট টেকিং লেগ স্পিনার, যিনি ভবিষ্যতে দলের জন্য বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রিশাদের বোলিংয়ে যে আগ্রাসন, সাহস এবং বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে, তা খুব কম বয়সী স্পিনারদের মধ্যে দেখা যায়। বিশেষ করে পাকিস্তানের ব্যাটিং কন্ডিশনে এমন ধারাবাহিকভাবে সফল হওয়া তার মানসিক দৃঢ়তা ও ক্রিকেটীয় পরিপক্বতারই ইঙ্গিত দেয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ দলের মূল স্পিন আক্রমণ নির্ভর করে অফ স্পিনারদের ওপর। কিন্তু টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি—সব ফরম্যাটেই একজন কার্যকর লেগ স্পিনারের প্রয়োজনীয়তা আজ অপরিহার্য। রিশাদ যদি এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স বজায় রাখতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে তাঁকে জাতীয় দলে নিয়মিত দেখতে পাওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার।
সব মিলিয়ে বলা যায়, পাকিস্তানের মাটিতে রিশাদের এই উজ্জ্বল পারফরম্যান্স শুধু একটি ব্যক্তিগত অর্জন নয়—এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার বার্তাও। এখন শুধু অপেক্ষা, রিশাদ কবে পুরোপুরি জাতীয় দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ