
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে যার নাম চিরভাসমান হয়ে থাকবে, সেই লিওনেল মেসি এখন মাঠের লড়াইয়ে ধীরে ধীরে বিদায়ের প্রহর গুনছেন। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে অগণিত ট্রফি জিতে, ব্যক্তিগত অর্জনের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে এখন তিনি এক পরিপূর্ণ জীবনের অধ্যায়ে। তবে খেলার মাঠে নিজের অধ্যায় শেষের দিকে হলেও, ফুটবল এখনও তাঁর নিত্যসঙ্গী। এবার সেই প্রেম ভাগ করে নিচ্ছেন তিন সন্তানের সঙ্গে। ফুটবল–মুগ্ধ বাবা মেসি নিজের উত্তরসূরিদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন নতুনভাবে।
সম্প্রতি “সিম্পলি ফুটবল”–কে দেওয়া এক হৃদয়ছোঁয়া সাক্ষাৎকারে মেসি তুলে ধরেছেন তাঁর ছেলেদের ফুটবল-ভালোবাসা ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা। চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, কোন ছেলে কীভাবে ফুটবলে এগোচ্ছে, কার স্বভাব কেমন, এবং কে কোন পজিশনে খেলার ঝোঁক দেখাচ্ছে।
ফুটবল পরিবারে বেড়ে ওঠা তিন ভবিষ্যৎ খেলোয়াড়
লিওনেল মেসির তিন ছেলে—থিয়াগো, মাতেও ও চিরো—ছোট থেকেই বলের সঙ্গী। বাবার সঙ্গে তারা মাঠে-মাঠে সময় কাটায়, অনুশীলন করে, খেলে ও শেখে। মেসি বলেন, “তারা সারাদিনই বল নিয়ে পড়ে থাকে। ওদের সঙ্গে সময় কাটানো দারুণ এক অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন ওরা অনুশীলন করে, খেলে, চ্যালেঞ্জ নেয়। এটা একদম স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওরা খুবই সহজ-সরল স্বভাবের।”
তবে সাংবাদিকরা যখন জানতে চাইলেন, তিন ছেলের মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়?—মেসি একগাল হেসে উত্তর দেন, “তিনজনই আলাদা। আমি যদি এখন একজনের নাম বলি, পরে বাকি দুজন অভিযোগ করবে—তুমি কেন তার নাম বললে? তাই নামটা আমি নিজের কাছেই রাখছি।”
কে কোন পজিশনে খেলবে?
মেসির ফুটবলবিশ্লেষণ যেন এক অভিজ্ঞ কোচের চোখ দিয়ে ছেলেদের প্লেয়ার প্রোফাইল তুলে ধরে। তিনি বলেন,
থিয়াগো (সাবেক নাম অনুযায়ী বড় ছেলে): “সে বেশ চিন্তাশীল। খেলার সংগঠন বোঝে, ছন্দ বোঝে। সে মূলত একজন মিডফিল্ডার হিসেবে খেলে, যারা গোটা দলের মস্তিষ্ক।”
মাতেও (মেজ ছেলে): “ওর ঝোঁক ফরোয়ার্ড পজিশনের দিকে। গোল করতে পছন্দ করে, গোলের কাছাকাছি থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অনেকটা ফিনিশার টাইপ। সে বুদ্ধিমান ও আক্রমণাত্মক ফরোয়ার্ড।”
চিরো (ছোট ছেলে): “সে অনেক বেশি বিস্ফোরক ও চ্যালেঞ্জপ্রিয়। এক অন এক লড়াই পছন্দ করে, নিজের খেলা তৈরিতে আগ্রহী। তার মধ্যে ড্রিবলার বা উইঙ্গারের মতো সাহস ও কৌশল রয়েছে।”
শুধু বাবাই নয়, তারা অনুসরণ করে বর্তমান তারকাদেরও
যদিও তাদের বাবা বিশ্বের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন, তারপরও মেসির ছেলেরা নিজেদের চোখ খোলা রাখে সমসাময়িক ফুটবলের দিকে। মেসি বলেন, “তারা শুধু আমাকে দেখেই না, আরও অনেককেই ফলো করে। এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস, হলান্ড, লেভানডফস্কি, লামিন—সবাইকে চেনে, দেখে, এবং নিয়ে আলোচনা করে। তারা যেন পুরো ফুটবলবিশ্বের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।”
তবে মেসি এ-ও জানান, “তারা শুধু দেখে না, জানতে চায়। অনুকরণ করতে চায় না, কিন্তু তারা কীভাবে খেলে, কেমন খেলে—সবকিছু জানার চেষ্টা করে। এটা তাদের আগ্রহের গভীরতা দেখায়।”
বাবা মেসির চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন
এভাবেই সময়ের সেরা ফুটবলার এখন সময় কাটাচ্ছেন নতুন এক চিরন্তন খেলায়—পিতৃত্বে। নিজের সন্তানেরা ফুটবলের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে দেখে তিনি গর্বিত ও আনন্দিত। তবে তার অভিমত, তারা যেন স্বাভাবিকভাবে নিজেদের পথ খুঁজে পায় এবং ফুটবলকে উপভোগ করে। চাপ বা প্রত্যাশার ভারে নয়, বরং আনন্দ আর ভালোবাসা থেকেই তারা যেন বেড়ে ওঠে।
লিওনেল মেসির ছেলে হয়ে ফুটবল খেলা নিঃসন্দেহে এক অনন্য পরিচয়ের ব্যাপার। তবে এই পরিচয়ের বাইরে গিয়ে তারা যদি নিজেরাই একেকজন নাম করে ফেলতে পারে, তবেই সেটি হবে বাবা মেসির জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনে থিয়াগো-মাতেও-চিরো এই নামগুলো কেবল 'মেসির ছেলে' হিসেবে নয়, বরং নিজেদের আলাদা পরিচয় নিয়ে ফুটবল দুনিয়ায় জায়গা করে নিতে পারে কিনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ