
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় দলের তরুণ ব্যাটসম্যান তাওহীদ হৃদয়ের ক্যারিয়ারে যেন বারবার শৃঙ্খলাভঙ্গের ছায়া। মাঠের ভেতরে এবং বাইরে আচরণগত সমস্যার কারণে গত কিছুদিনে তার নাম বারবার এসেছে বিতর্কের কেন্দ্রে। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আবারও এক অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দিলেন তিনি, যার পরিণতিতে তিনি জরিমানার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন।
এর আগে চলতি ডিপিএলে আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণের দায়ে তাওহীদ হৃদয় দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করেছিলেন। সেই ঘটনা নিয়ে কম আলোচনা-সমালোচনা হয়নি ক্রিকেটাঙ্গনে। তখনই সতর্ক করা হয়েছিল তাকে, ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ করলে আরও কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে। তবে সাবধান হওয়ার বদলে তাওহীদ যেন নিজের অস্থির আচরণে আরও জড়িয়ে পড়ছেন।
কী ঘটেছিল শনিবারের ম্যাচে?
শনিবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে মোহামেডানের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঘটে নতুন ঘটনা। প্রতিপক্ষ বোলার ওয়াসি সিদ্দিকীর বলে ক্যাচ আউট হওয়ার পর আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানান তাওহীদ হৃদয়। নিয়ম অনুযায়ী আউট ঘোষণার পর ব্যাটসম্যানকে দ্রুত মাঠ ছাড়তে হয়। কিন্তু হৃদয় দীর্ঘ সময় উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকেন, মাঠ ছাড়ার কোনো উদ্যোগই নেননি।
এ সময় প্রতিপক্ষ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের খেলোয়াড়রা আউট উদযাপন করলেও, হৃদয়ের অনীহা পরিস্থিতি অস্বস্তিকর করে তোলে। মাঠের নিয়মকানুনের প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞার এমন আচরণ আইসিসির আচরণবিধি অনুযায়ী বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
জরিমানা ও ডিমেরিট পয়েন্ট
এই আচরণের জন্য ম্যাচ রেফারি তাওহীদ হৃদয়কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন এবং তার নামের পাশে যুক্ত করেছেন একটি নতুন ডিমেরিট পয়েন্ট। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও আম্পায়ার্স কমিটির ইনচার্জ অভি আবদুল্লাহ আল নোমান।
তিনি জানান, হৃদয় শুধু মাঠে অসদাচরণ করেই ক্ষান্ত হননি; ম্যাচ শেষে নির্ধারিত শুনানিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য ডাকা হলেও তিনি সাড়া দেননি। অভি আবদুল্লাহ বলেন,
‘আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করা এবং ম্যাচ রেফারির ডাকা শুনানিতে অংশ না নেওয়া—দুটোই শৃঙ্খলাভঙ্গের পর্যায়ে পড়ে। সে কারণেই এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’
নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা
তাওহীদ হৃদয়ের ডিমেরিট পয়েন্টের সংখ্যা আগে থেকেই ছিল ৭। নতুন করে পাওয়া এক পয়েন্ট নিয়ে এখন তার ডিমেরিট পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৮। ডিপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, ৮ থেকে ১১ ডিমেরিট পয়েন্ট জমা হলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এর অর্থ হলো, মোহামেডানের হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচসহ পরবর্তী তিনটি ম্যাচে তাওহীদ হৃদয়ের খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মোহামেডানের টাইটেল রেসের জন্য এটি হতে পারে বড় ধাক্কা। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন প্রতিটি ম্যাচ জয়-পরাজয়ের লড়াইয়ে নির্ধারক হয়ে উঠছে।
ডিপিএলের নিয়মানুযায়ী, ম্যাচ রেফারি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এখন দেখার বিষয়, তারা সরাসরি চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন কি না, নাকি হৃদয়ের কোনো আপিল গ্রহণ করে শাস্তি কিছুটা লঘু করা হয়।
হৃদয়ের শৃঙ্খলাজনিত অতীত
উল্লেখ্য, চলতি ডিপিএলে এর আগে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তাওহীদ হৃদয়। সেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময়ই তাকে সতর্ক করা হয়েছিল ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো আচরণ না করেন। তবে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের একই ধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়া হৃদয়ের আচরণগত সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
জাতীয় দলের ভবিষ্যতের অন্যতম ভরসা হিসেবে বিবেচিত এই তরুণ ক্রিকেটারের বারবারের শৃঙ্খলাভঙ্গ এখন প্রশ্ন তুলছে তার পেশাদারিত্ব নিয়েও। দেশের ক্রিকেট বোর্ড, কোচিং স্টাফ ও সিনিয়র খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে হৃদয়ের প্রতি ধৈর্য ধরে আচরণ সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, সে আহ্বান হৃদয়ের আচরণে এখনও তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বার্থেই তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের মধ্যে শৃঙ্খলার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তাওহীদ হৃদয়ের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্ভাবনাময় একজন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি প্রযোজ্য।
কী সিদ্ধান্ত নেয় ডিপিএল কর্তৃপক্ষ, এবং এর প্রেক্ষিতে হৃদয়ের ভবিষ্যৎ কী মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ