
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেই দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলেন বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। সিলেট টেস্টের হতাশা পেছনে ফেলে চট্টগ্রামের উইকেটে নিজের পুরনো চেহারাতেই ফিরেছেন তিনি। দিনশেষে তার ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়েছে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬০ রানে ৫ উইকেট শিকার করে তাইজুল দলকে এনে দিয়েছেন শক্তিশালী অবস্থান।
তাইজুলের এই পারফরম্যান্স বাংলাদেশের জন্য যেমন স্বস্তির, তেমনি ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারে তিনি গড়েছেন অনন্য কীর্তি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট শিকারের তালিকায় তিনি ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি পাকিস্তানি পেসার ওয়াসিম আকরামকে এবং বসেছেন আরেক কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনিসের পাশে।
সিলেট টেস্টে তাইজুলের পারফরম্যান্স ছিল মোটেও আশানুরূপ নয়। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র দুই উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। তার অনুজ্জ্বল বোলিংয়ের ছাপ পুরো দলের পারফরম্যান্সেও পড়ে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেই টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে যায় মাত্র ৩ উইকেটে। পরাজয়ের চাপ, সমালোচনা আর সিরিজ হার এড়ানোর তাগিদে তাই চট্টগ্রাম টেস্ট হয়ে দাঁড়ায় বাঁচামরার লড়াই।
চাপের মুখে তাইজুল যেন নিজের অভিজ্ঞতার সবটুকু প্রয়োগ করলেন। প্রথম দিন থেকেই বল হাতে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে জিম্বাবুয়ের ব্যাটারদের ভুগিয়েছেন। একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে চাপে রেখেছেন সফরকারীদের।
দিন শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ২২৭ রান। বলা চলে, পুরো ইনিংসে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের মূল ভরসাই ছিলেন তাইজুল ইসলাম।
তাইজুল ইসলাম আজকের পারফরম্যান্স দিয়ে ইতিহাসের পাতায়ও নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার টেস্ট উইকেট সংখ্যা এখন ৪৮। এতদিন এই তালিকায় ওয়াসিম আকরাম ছিলেন এগিয়ে। পাকিস্তানের কিংবদন্তি এই পেসার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ টেস্টে নিয়েছিলেন ৪৭ উইকেট। অথচ তাইজুল মাত্র ৮ টেস্টেই টপকে গেলেন তাকে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় তাইজুল এখন যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে। তার সঙ্গে আছেন শ্রীলঙ্কার চামিন্ডা ভাস।
শীর্ষে রয়েছেন স্পিন জাদুকর মুত্তিয়া মুরালিধরন, যিনি নিয়েছেন ৮৭টি উইকেট। দ্বিতীয় স্থানে আছেন পাকিস্তানের ভয়ঙ্কর পেসার ওয়াকার ইউনিস, যার শিকার ৬২ উইকেট। তাইজুল ও ভাস দুজনের ঝুলিতে রয়েছে ৪৮টি করে উইকেট।
শুধু মোট উইকেট সংখ্যায় নয়, ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার তালিকাতেও আজ তাইজুল গড়লেন বড় রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার সংখ্যায় তিনি এখন ওয়াকার ইউনিসের সমকক্ষ। উভয়েই পাঁচবার করে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। শীর্ষে রয়েছেন মুরালিধরন, যিনি ৬ বার ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে তাইজুল এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া বোলার। এই তালিকায় শীর্ষে আছেন সাকিব আল হাসান, যার রয়েছে ১৯টি ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। আজকের পারফরম্যান্স দিয়ে তাইজুল নিজের ১৬তম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক স্পর্শ করলেন।
তাইজুলের এই পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে এই বাঁহাতি স্পিনার এক অনন্য সম্পদ হয়ে উঠেছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিশ্লেষক আমিনুল ইসলাম বুলবুল মন্তব্য করেন, "তাইজুলের মতো বোলাররা দিনের শেষে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। চাপের মধ্যে তার নিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য এবং লাইন-লেন্থের প্রতি নিষ্ঠা তাকে বিশেষ করে তুলেছে।"
ক্রিকেট বিশ্লেষক আতহার আলি খান বলেন, "তাইজুলের বোলিংয়ে একটা প্যাটার্ন আছে। তিনি ধীরেধীরে ব্যাটারদের ফাঁদে ফেলেন। তার পরিশ্রম এবং নিবেদন আজকের পারফরম্যান্সে স্পষ্ট।"
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে তাইজুলের ৫ উইকেট বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল স্বস্তির নাম। কিন্তু ম্যাচ এখনো অনেক বাকি। দ্বিতীয় দিন দ্রুত জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট তুলে নেওয়া এবং নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসে ভালো শুরু করাই হবে বাংলাদেশের লক্ষ্য।
তাইজুলের মতো অভিজ্ঞ বোলাররা যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন, তবে এই টেস্ট জিতে সিরিজে সমতা আনার সুযোগ থাকবে টাইগারদের জন্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ